প্রতিশ্রুতি কতটা রাখছে তালেবানরা?
২২ আগস্ট ২০২১আনুষ্ঠানিকভাবে এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে কোন সরকার নেই৷ নতুন সরকারের গঠন নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে গনি সরকারকে হটিয়ে কাবুলের দখল নেয়া তালেবানরা৷ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত হবে বলে তাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে৷
সরকার না থাকলেও কাবুল ও আফগানিস্তান কার্যত তালেবানরাই নিয়ন্ত্রণ করছে৷ আগের সরকার বা বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করাদের উপর বিভিন্ন জায়গায় হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ সাংবাদিকদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, না পেয়ে পরিবারের সদস্যকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে৷ হাজারা, শিয়াসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
এইসব ঘটনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না তালেবানরাও৷ তাদের এক নেতা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে স্বীকার করে বলেছেন, ‘‘আমরা নাগরিকদের উপর নিষ্ঠুরতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর কিছু ঘটনা জানতে পেরেছি৷ যদি তালেবানের কোন সদস্য এমন আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা আতঙ্ক, চাপ ও উদ্বেগের বিষয়টি বুঝতে পারছি৷ মানুষ মনে করছে আমরা দায়িত্বশীল হব না, কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়৷''
দেশ ছাড়ছেন আতঙ্কিত মানুষ
প্রস্তাবিত নতুন কাঠামোর মধ্যে প্রত্যেকের অধিকার রক্ষা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে তালেবান নেতারা৷ তবে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের নিষ্ঠুর আচরণের কারণে এ বিষয়ে সবাই আশ্বস্ত হতে পারছেন না৷ নারী-পুরুষ সম্পর্কের জন্য পাথর নিক্ষেপ, চুরির জন্য হাত কেটে ফেলা, মেয়েদের শরীর দেখা যাওয়ায় লাঠিপেটার মতো ঘটনা সেসময় সাধারণ হয়ে গিয়েছিল৷
এ কারণে তালেবানরা পুরোপুরি সরকারের দায়িত্ব নেয়ার আগেই আফগানিস্তান ছাড়তে চাইছেন অনেকে৷ তাদের ভয়, গত ২০ বছরে টেলিযোগাযোগ, গণমাধ্যম, চলাফেরার স্বাধীনতা, নারী ও মেয়েদের অধিকারসহ যেসব সুযোগ তৈরি হয়েছিল এবং যেভাবে জীবন যাপন করছিলেন তা আবারও এ মৌলবাদী গোষ্ঠীটি ধ্বংস করে দেবে৷
এমন বাস্তবতায় কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন দেশ ছাড়তে কাবুল বিমানবন্দরে প্রবেশের চেষ্টা করছেন৷ রোববার বিমানবন্দর এলাকায় সাতজন মারা গেছেন৷ মানুষকে শৃঙ্খলায় আনতে তালেবান সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জ করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে৷ ন্যাটোর হিসাবে, কাবুল বিমানবন্দর ও এর আশেপাশে গত সাতদিনে মোট ২০জন মারা গেছেন৷
যারা দেশ ছাড়তে চাইছেন তাদের সমালোচনা করে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় তালেবান সমর্থক এক ইমাম মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘যাদের হৃদয় দুর্বল তারাই অ্যামেরিকার বিমানের পেছনে দৌড়াচ্ছে৷'' তিনি সবাইকে দেশে অবস্থান ও দেশ গড়ায় অংশ নেয়ারও পরামর্শ দেন৷
এর আগে তালেবানের পক্ষ থেকেও মুসল্লিদের প্রতি এমন বক্তব্য দিতে ইমামদের আহ্বান জানানো হয়েছিল৷ তালেবানের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, যারা বিমানবন্দরে ছুটে যাচ্ছে তাদেরকে বাধা দেয়া হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় পশ্চিমাদের আরো ভালো পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল৷''
প্রতিশ্রুতির পরও প্রতিশোধমূলক আচরণ বন্ধ হয়নি
তালেবানরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা কারো সঙ্গে কোন প্রতিশোধমূলক আচরণ করবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বলছে, গত কয়েকদিনে তালেবান শাসনের বিরোধী এবং বিগত সরকার ও বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে৷
ডয়চে ভেলের একজন আফগান সম্পাদক জানিয়েছেন, তালেবানরা তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাকে না পেয়ে পরিবারের এক সদস্যকে হত্যা করেছে৷
জাতিসংঘে জমা পড়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানরা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা আফগানদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে৷
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত জুলাইতে নয়জন হাজারা নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে৷ এদের মধ্যে ছয়জনকে গুলি করে ও তিনজনকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে তালেবানরা৷
অ্যামনেস্টি বলছে, এমন আরো অনেক ঘটনা ঘটতে পারে যার খবরই পাওয়া যাচ্ছে না৷ কেননা তালেবানরা বিভিন্ন জায়গা দখলের পর সেখানকার মোবাইল সেবা বন্ধ করে দিয়েছে যাতে মানুষ বাইরে যোগাযোগ করতে না পারে এবং কী ঘটছে তা সম্পর্কে গোটা পৃথিবী যাতে অন্ধকারে থাকে৷
এফএস/আরআর (এএফপি, এপি, রয়টার্স)