বায়ু দূষণে মৃত্যু নেই!
৩ ডিসেম্বর ২০১৯মাত্র কিছু দিন আগেই ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি শুনানি চলাকালীন বলেছিলেন, দিল্লির বায়ু-দূষণের মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, একে ‘নরকে’র সঙ্গে তুলনা করা যায়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও-র রিপোর্ট বলছে, বায়ু দূষণের নিরিখে সব চেয়ে দূষিত শহর গুলির মধ্যে অন্যতম দিল্লি৷ পিছিয়ে নেই কলকাতাও৷ বায়ু দূষণের কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে এক নম্বরে ভারত৷ অথচ সেই দেশেরই পরিবেশ এবং বন সংরক্ষণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সংসদের উচ্চকক্ষে জানালেন, বায়ু দূষণের কারণে এ দেশে মৃত্যু হচ্ছে, এমন কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই৷ বরং তাঁর বক্তব্য, দেশের মানুষের শারীরিক সমস্যার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাদ্যাভ্যাস, কাজের চরিত্র, অর্থনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি৷
সোমবার রাজ্যসভায় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীকে একটি রিপোর্টের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়৷ পরিবেশ বিষয়ক একটি সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র ২০১৬ সালেই বায়ু দূষণের জন্য ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, বায়ু দূষণের কারণে অসুখ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ তারই জবাবে বাবুল সুপ্রিয়ের এই উক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে৷ পরিবেশবিদদের বক্তব্য, দূষণ সম্পর্কে সাধারণ ধারণাটুকুও নেই পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীর, সে কারণেই এমন আলটপকা মন্তব্য তিনি করেছেন৷
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, দূষণের কারণে মৃত্যুর হার যে বাড়ছে, তা বোঝার জন্য বেশি পড়াশোনা করারও প্রয়োজন হয় না৷ একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই তা জানা যায়৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের জন্য ভারতে প্রতি বছর অন্তত ২৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়৷ বাড়ছে ফুসফুসের রোগ৷ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা৷ ফলে পরিসংখ্যান নেই বলে বাবুল সুপ্রিয় যে দাবি করেছেন, তা ধোপে টেকে না বলেই দাবি পরিবেশকর্মীদের৷ বরং তাঁদের বক্তব্য, সত্যকে অস্বীকার না করে, কী করে দূষণের মাত্রা কমানো যায়, সে দিকে নজর দিক সরকার৷