জওয়ানের মৃত্যু সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে?
১৮ অক্টোবর ২০১৯সাবেক রাষ্ট্রদূত লে. জেনালের (অব.) হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলছেন, ‘‘দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি অনেক মজবুত৷ এই ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না৷ আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে৷’’
বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে ভারতীয় জেলেদের ইলিশ ধরা নিয়ে বিবাদে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে বৃহস্পতিবার একজন বিএসএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে৷ এক সপ্তাহ আগে কুমিল্লায় মাদক ব্যবসায়িকে ধরতে গিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন তিনজন র্যাব সদস্য ও তাদের দুই নারী সোর্স৷ তাদের আটক করে মারধোর করে বিএসএফ৷ ১০ ঘন্টা পর আহত অবস্থায় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়৷
জেনারেল হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেছেন৷ সেখানে চমৎকার আলোচনা হয়েছে৷ আসলে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা অনেক সময় মাঠ পর্যায়ের সৈনিকদের কাছে পৌঁছে না৷ এটা তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে৷ তাহলে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা কমে যাবে৷’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল শুক্রবার বলেছেন, ‘‘বিজিবির তথ্যমতে পতাকা বৈঠকের অপেক্ষা না করে তারা (বিএসএফ) আটক জেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিল৷ আর তখনই এই গোলাগুলির ঘটনা৷ এতে একজন বিএসএফ সদস্য মারা যান৷ বিজিবি মহাপরিচালক ও বিএসএফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে৷ আমরা মনে করি, এটা ভুল বোঝাবুঝি থেকেই হয়েছে৷ দুই দেশই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷ আমরা আশা করি আলাপের মাধ্যমে একটা সুরাহা হবে৷’’
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মা নদীতে টহল দিচ্ছিল বিজিবি সদস্যরা৷ এমন সময় বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে একটি ভারতীয় মাছ ধরার ট্রলার দেখতে পান তারা৷ ট্রলারটিসহ প্রণব মণ্ডল নামে একজন জেলেকে আটক করলেও অন্য দুই জেলে পালিয়ে যান৷ তারা খবর দিলে ঘটনাস্থলে হাজির হয় বিএসএফের একটি দল৷ সেখানে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে৷ এতে বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিং (৫২) মারা যান৷ আহত হন কনস্টেবল রাজবীর সিং যাদব৷ তার হাতে গুলি লেগেছে৷ তাকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷
ঘটনার একদিন পরও শুক্রবার দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে৷ বিজিবি বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, বিএসএফ আগে গুলি করার পর আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি ছোড়ে৷ অন্যদিকে বিএসএফের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিএসএফ জওয়ানরা যখন ফিরে যাচ্ছিল তখন বিজিবি গুলি ছোড়ে৷ এতে বিজয় নিহত হন এবং রাজবীর আহত হন৷
এদিকে আটক জেলে ভারতের মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী থানার সাহেবনগর ছিড়াচর এলাকার বসন্ত মণ্ডলের ছেলে প্রনব মন্ডল৷ তার বিরুদ্ধে চারঘাট থানায় দু'টি মামলা করেছে বিজিবি৷ শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ সীমান্ত অতিক্রম এবং নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ ধরার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে৷
এর আগে গত ১০ অক্টোবর কুমিল্লা সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ীদের ধাওয়া করতে গিয়ে ভুল করে ভারতের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন র্যাবের তিন সদস্য ও তাদের দুই নারী সোর্স৷ র্যাব সদস্যরা হলেন, কনস্টেবল আবদুল মতিন, কনস্টেবল রিগেন বড়ুয়া ও সৈনিক ওয়াহেদুল ইসলাম৷ তাদের মারধর করে আটকে রাখে বিএসএফ৷ তাদের আগ্নেয়াস্ত্রও জব্দ দেখানো হয়৷ ১০ ঘণ্টা পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের ফিরিয়ে দেয় বিএসএফ৷
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘র্যাব টহল দিতে গিয়ে ভুলে ভারতীয় সীমানায় ঢুকে গিয়েছিল৷ বিএসএফ তাদের তিনজনকে চোখ বাঁধা এবং আহত অবস্থায় আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে৷ এটাও আলোচনার মাধ্যমে সুরহা হবে৷’’
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুই দেশের সম্পর্কের যে ভিত্তি তাতে এই ধরণের ছোটোখাটো ঘটনায় প্রভাব পড়বে না৷ তবে ঘটনাগুলো অনাকাঙ্খিত৷ আমরা আগেও দেখেছি, বিএসএফের আচরণে একটু সমস্যা আছে৷ তারা সীমান্তে কাউকে দেখলেই গুলি করে৷ সে যদি অপরাধীও হয় তাহলেওতো গুলি করা ঠিক না৷ আপনি তাকে ধরে বিচারের আওতায় নেন৷ দুই দেশের মধ্যে এত চমৎকার সম্পর্ক সেখানে কথায় কথায় গুলি করা ঠিক? আসলে আলোচনার মাধ্যমে এগুলোর সমাধান করা উচিত৷’’