বিপন্ন ফিজির প্রবাল প্রাচীর
১৮ মার্চ ২০১৫ফিজির জেলেদের জীবন মোটেই সহজ নয়৷ তাদেরই একজন বলেন, ‘‘মাছ ধরার কাজে বিপদ আছে বৈকি৷ আমি নিজে বেশ কয়েকজন বন্ধুকে হারিয়েছি৷ তবুও সংসার চালাতে আমাকে এ কাজ করতেই হয়৷''
এমন মনোভাবের মূল্য কম নয়৷ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ৷ এক স্কুবা ডাইভিং শিক্ষকের তা চোখে পড়ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সমুদ্রের কোরাল প্রাচীর অনেক বদলে গেছে৷ যখন আমি ডাইভিং শুরু করেছিলাম, তখন সব কিছু অপূর্ব সুন্দর ছিল৷ কোরাল অনেক বেশি উজ্জ্বল ছিল, মাছগুলোও অনেক বড় ছিল৷''
জার্মান মেরিন বায়োলজিস্ট ইয়ান হেনিং স্টেফেন-ও ফিজির পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত৷ তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা প্রকৃতি সংরক্ষণে আগ্রহী, তাঁদের মনে আদর্শ ও আবেগের তাড়না কম নয়৷ তাঁরা নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল৷ তবে শুধু ঘুরে ঘুরে পরামর্শ দিলে চলবে না, মানুষের কথা শুনতে হবে, শিখতে হবে, ভেবে দেখতে হবে৷ তারপর গোটা প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে ভাবতে হবে, ঠিক কীভাবে সমস্যার মোকাবিলা করা যায়৷''
ডাইভিং প্রতিবারই অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়, নতুন গল্পের সৃষ্টি হয়৷ ইয়ান হেনিং স্টেফেন এই প্রথম ফিজি-র ‘গ্রেট সি রিফ'-এ নামছেন৷ সেটির সুরক্ষায় এই সমুদ্রবিজ্ঞানী টেকসই সংরক্ষণের পথ খুঁজছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গ্রেট সি রিফ আসলে প্রবালের বিশাল এক কাঠামো৷এটা গোটা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যারিয়ার রিফ৷ তবে এত বৈচিত্র্য সত্ত্বেও যেটা চোখে পড়ে, সেটা হলো মাছেদের গড় সাইজ বেশ কম৷ লাভজনক মাছগুলি বেশি বড় হবার আগেই মরে যায়৷ অর্থাৎ তাদের আগেই ধরা হয় বা মেরে ফেলা হয়৷ ফলে সেটা বেশ দুশ্চিন্তার বিষয় বৈকি৷ এমনটা চলতে থাকলে এই ‘গ্রেট সি রিফ' আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এভাবে আর থাকবে না৷''
ফিজির রাজধানী সুভা-র মাছের বাজারে এই মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার প্রভাব চোখে পড়ে৷ কোনো বড় কোম্পানি সমুদ্রের গভীরে সব মাছ ধরে ফেলছে না৷ উপকূলের ছোট জেলেরাই তার একটা বড় অংশ ধরছে৷ বিক্রির জন্য হোক বা রপ্তানি, সব মাছই প্রথমে বাজারে আনা হয়৷ এমনকি বে-আইনি মাছও আসে৷ চাহিদা অনুযায়ী জোগানের ব্যবস্থা রয়েছে৷
প্রবাল প্রাচীরের জন্য এর পরিণাম মারাত্মক হচ্ছে৷ অদূর ভবিষ্যতেই জেলেদের জন্য আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না৷ আর মাছ না থাকলে কোরাল-ও মরে যাবে, সংবেদনশীল ‘ইকো সিস্টেম' নষ্ট হয়ে যাবে৷