‘বোকা’ বলায় মাক্রোঁর নিন্দা জানিয়েছে হাইতি
২২ নভেম্বর ২০২৪একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মাক্রোঁ এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন৷ সেখানে হাইতির বর্তমান রাজনৈতিক ও মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলার সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট হাইতির নেতৃত্বকে ‘সম্পূর্ণ বোকা' আখ্যা দেন৷
মাক্রোঁর ‘অগ্রহণযোগ্য’ এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছেন হাইতির পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হাইতির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট কাউন্সিল তার ‘অবন্ধুসুলভ এবং অনুপযুক্ত মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ’ করেছে এবং এই বক্তব্য সংশোধন করার আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানোর কথাও জানিয়েছে হাইতি৷
মাক্রোঁ কী বলেছিলেন?
বুধবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে চলা জি-২০ সম্মেলনের বাইরে তোলা একটি ভিডিও প্রকাশ হয়৷ সেখানে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ হাইতির অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদকে এই মাসের শুরুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তকে ‘সম্পূর্ণ বোকা'র মতো কাজ হিসাবে উল্লেখ করেন৷
মাক্রোঁ একজন পথচারীর সঙ্গে কথা বলছিলেন, যাকে ফরাসি কর্মকর্তারা হাইতির নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন৷ মাক্রোঁকে ক্রমাগত মৌখিক আক্রমণ করছিলেন এই ব্যক্তি এবং হাইতির পরিস্থিতির জন্য ফ্রান্সকে দায়ী করছিলেন৷ এক পর্যায়ে মাক্রোঁ সেই ব্যক্তিকে এর জবাব দেন৷
তিনি বলেন, ‘‘সত্যি বলতে কি, হাইতিয়ানরাই মাদক পাচারের অনুমতি দিয়ে হাইতিকে ধ্বংস করেছে৷ এবং এরপরে তারা কী করেছে: প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অসাধারণ, আমি তার পক্ষে বলেছি, তারা তাকে বরখাস্ত করেছে!’’
হাইতির সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্যারি কনিলের কথা উল্লেখ করেছেন মাক্রোঁ৷ হাইতিতে গ্যাং সংঘাত বেড়ে যাওয়ার মধ্যে মাত্র পাঁচ মাস চাকরির পরে ১০ নভেম্বর তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়৷
ভিডিওতে পথচারীকে মাক্রোঁ বলেন, ‘‘এটা ভয়ানক, এটা ভয়ানক৷ আমি তার বিকল্প পাবো না৷ তারা সম্পূর্ণ বোকা৷ কখনোই তাকে বরখাস্ত করা উচিত ছিল না৷ প্রধানমন্ত্রী দারুণ ছিলেন৷’’
ফ্রান্সেও প্রতিক্রিয়া
হাইতির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ফরাসি রাষ্ট্রদূত স্বীকার করেছেন যে এমন মন্তব্য ‘দুর্ভাগ্যজনক'৷
এদিকে, বামপন্থি দল লা ফ্রান্স ইনসুমিস এর একজন ফরাসি আইন প্রণেতা আন্তোয়া লোমোঁ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাক্রোঁর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন৷
তিনি বলেছেন, ‘‘মাক্রোঁর লজ্জা পাওয়া উচিত৷ এটা কী ধরনের ভাষা!’’
মাক্রোঁ এখনো তার মন্তব্য নিয়ে আলোচনার জবাব দেননি৷ তবে, ব্রাজিল থেকে চিলিতে যাওয়ার পর তার বক্তব্যে সমঝোতার আভাস পাওয়া গেছে৷
চিলির ন্যাশনাল কংগ্রেসে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘‘ফ্রান্স হাইতির জনগণের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য নেয়া সব উদ্যোগকে সমর্থন করবে৷’’
হাইতিতে নিরাপত্তা মিশনে অর্থায়নের পাশাপাশি জাতিসংঘের সৈন্যদের জন্য ফরাসি এবং ক্রেওল ভাষার ক্লাসের জন্যও অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মাক্রোঁ৷ এজন্য জাতিসংঘের তহবিলে ৪০ লাখ ইউরো দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷
সাবেক ফরাসি উপনিবেশ হাইতি
সাবেক ফরাসি উপনিবেশ হাইতিতে রাষ্ট্রপতি মাক্রোঁর মন্তব্য ভালোভাবে গৃহীত হয়নি৷ দেশটির মানুষেরা ফরাসি উপনিবেশ থাকাকালীন দাসত্ব ও শোষণের শিকার হয়েছিল৷
১৮০৪ সালে হাইতি স্বাধীনতা ঘোষণা করে৷ কিন্তু ১৮২৫ সালে ক্রীতদাস এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের জন্য উল্টো ফ্রান্সকেই ‘ক্ষতিপূরণ’ দিতে বাধ্য হয়েছিল হাইতি৷
হাইতির স্বাধীনতা ঋণ নামে পরিচিত এই ‘ক্ষতিপূরণ' এর পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ফ্রাংক (তৎকালীন ফরাসি মুদ্রা)৷ প্রতি বছর তিন কোটি ফ্রাংক দিয়ে পাঁচ বছরে এই ঋণ শোধ করা হয়৷ বর্তমানের হিসাবে হাইতিকে প্রায় ৫৬ কোটি ডলার "ক্ষতিপূরণ" দিতে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
হাইতির অর্থনীতিতে বিনিয়োগের অভাবকে বিবেচনায় নিয়ে অনেকে এই ‘ক্ষতিপূরণ'-এর পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি দাঁড়াতে পারে বলে দাবি করেন৷
বিশেষজ্ঞদের অনেকে এই ঋণ আরোপ করাকেই হাইতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী করেন৷ এই ক্ষতির জন্য উলটো ফ্রান্সকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছেন অনেকে৷
এডিকে/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)