1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মরণোত্তর দেহদান এত জটিল!

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আমার মরদেহ নিয়ে কী হবে তা ভাবার মতো বয়স এখনো হয়নি মনে করেছিলাম৷ কিন্তু সেদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি ফেসবুকে এক সহকর্মী মরণোত্তর দেহদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ তার আগ্রহ দেখে দেহদানের বিষয়ে জানতে গিয়ে দেখি বিষয়টি বেশ জটিল৷

https://p.dw.com/p/3PvTD
ছবি: Imago

মরণোত্তর দেহদানের বিষয়টি প্রথম ভাবিয়েছিল খুব ছোটবেলায়৷ ক্লাস থ্রি বা ফোরে পড়ি তখন৷ হঠাৎ বিজ্ঞান শিক্ষক জানালেন স্কুলে একটা মানুষের কঙ্কাল এসেছে৷ এবং সেটা একটি সত্যিকারের মৃত মানুষের কঙ্কাল, প্লাস্টিকের না৷ সেই কঙ্কাল আবার রাখা হয়েছে যেখানে আমাদের ক্লাস হয় তার উপরের তলায়৷ তো দু'তিন বন্ধুকে সাথে নিয়ে একদিন টিফিনের সময় দুরু দুরু বুকে গিয়েছিলাম সেটি দেখতে৷ বদ্ধ ঘরে কঙ্কালটা কোন কারণে একটু নড়ে উঠেছিল৷ আর তাতেই ভয়ে আমাদের অবস্থা কাহিল৷ তারমধ্যে আবার এক সহপাঠী বললো, জানিস, যাদের কবর দেয়া হয়না, তাদের আত্মা চারপাশে ঘুরে বেড়ায়! 

আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

কঙ্কাল নিয়ে সেই ভীতি অবশ্য আর নেই৷ এখন কঙ্কাল দেখলে আর আত্মার কথা মনে হয় না৷ তবে, নিজে কঙ্কাল হয়ে যাবার সময় ঘনিয়ে আসছে সেটাও মনে করছি না৷ মাঝবয়সে এসে তাই হঠাৎ এক সহকর্মীর মরণোত্তর দেহদানের পোস্ট দেখে খানিকটা বিচলিত বোধ করছিলাম৷ পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে আগ্রহও তৈরি হলো৷ তাঁর পোস্টের সূত্র ধরেই কিছুটা খোঁজ নিলাম৷

যা তথ্য পেলাম, তাতে আসলে দেহদানে মানুষ উৎসাহিত হওয়ার চেয়ে নিরুৎসাহিতই হবে বেশি৷ কেন বলছি সেকথা:

প্রথমত, জার্মানির হাসপাতাল এবং গবেষণাকেন্দ্রগুলোর যত মরদেহ প্রয়োজন, তারচেয়ে অনেক বেশি মরদেহ দেয়ার আগ্রহী মানুষ রয়েছেন৷ আর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মরদেহ জমা রাখার জন্য দরকারি হিমাগার এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধারও ঘাটতি রয়েছে৷ ফলে, গবেষণাগারগুলো মানুষকে মরণোত্তর দেহদানে বরং নিরুৎসাহিত করছে৷ তারপরও কেউ যদি দেহদান করতে চান, তাহলে তার অন্তত ৬০০ ইউরো ফি দিতে হবে৷ 

দ্বিতীয়ত, বিষয়টি এমন নয় যে জার্মানিতে অনেক মানুষ বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা খাতে অধিকতর গবেষণার স্বার্থে মরণোত্তর দেহদান করছেন৷ আসলে, জার্মানিতে মৃতদেহের সৎকার অনেক ব্যয়বহুল এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাতে জনপ্রতি ছয়হাজার ইউরো পর্যন্ত খরচ হতে পারে৷ আর এই খরচের কিছুটা আগে স্বাস্থ্যবীমা থেকে পাওয়া গেলেও এখন আর তাও পাওয়া যায়না৷ ফলে অনেকে এই খরচ বাঁচাতে মরণোত্তর দেহদান করতে চান৷

তবে, পুরো দেহ না চাইলেও মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গদান করাকে উৎসাহিত করছে জার্মানি৷ এমনকি দেশটির প্রত্যেক নাগরিককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একজন মরণোত্তর অঙ্গদানকারী হিসেবে নথিভুক্ত করার আইনও প্রস্তাব করা হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে কেউ যদি অঙ্গদান করতে না চান তাহলে তাকে আলাদাভাবে জানাতে হবে যে তিনি আগ্রহী নন৷ 

যাহোক, আমার সেই সহকর্মী অবশ্য ফি দিয়ে হলেও মরণোত্তর দেহদানে আগ্রহী৷ তিনি এজন্য হাজার ইউরো দিতেও প্রস্তুত৷ আর শুধু জার্মানিতে নয়, বাংলাদেশেও দেহদানের জন্য নথিভুক্ত তিনি৷ তাঁর এই মহানুভবতায় মুগ্ধ আমি৷ তবে, একটা প্রশ্ন মনে ঘুরছে, তৃতীয় কোন দেশে তিনি মৃত্যুবরণ করলে তখন কোন দেশ তাঁর মরদেহের দাবিদার হবে?

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য