চ্যান্সেলর পদে আবারও ম্যার্কেল?
১৬ নভেম্বর ২০১৬মঙ্গলবার সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য দেন ব়্যোয়েটগেন৷ সিএনএনের সাংবাদিক ফ্রেড প্লাইটগেন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ম্যার্কেল আরও একবার চ্যান্সেলর পদের জন্য লড়বেন কিনা৷ উত্তরে সিডিইউ-র এই রাজনীতিবিদ সরাসরি বলেন, ‘‘তিনি (ম্যার্কেল) চ্যান্সেলর পদে লড়বেন৷'' সঙ্গে ব়্যোয়েটগেন এ-ও যোগ করেন যে, ম্যার্কেল ‘‘ইন্টারন্যাশনাল লিবারেল অর্ডার শক্তিশালী করতে চান এবং এর জন্য তিনি প্রস্তুত৷''
এরপর সাংবাদিক প্লাইটগেন ব়্যোয়েটগেনের কাছে জানতে চান ম্যার্কেল কি ট্রান্স-আটলান্টিক অঞ্চলের লিবারেল অর্ডার বজায় রাখতে আগ্রহী কিনা৷ উত্তরে তিনি বলেন, ম্যার্কেল ‘‘পশ্চিমা বিশ্বের এই রাজনৈতিক মতাদর্শের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি৷'' তবে ম্যার্কেলের একার পক্ষে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে সতর্ক করে দেন তিনি৷ তিনি মনে করেন, এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন৷
তবে জার্মান সরকার ও সিডিইউ দল বলেছে, তারা ব়্যোয়েটগেনের মন্তব্য নিশ্চিত করছে না বা প্রত্যাখ্যানও করছে না৷
গত ১১ বছর ধরে চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করা ম্যার্কেল অতীতে বলেছিলেন, উপযুক্ত সময়ে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবেন৷
ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টেফেন জাইবার্ট টুইটারে লিখেছেন, ‘‘কোনো কিছুই পরিবর্তিত হয়নি৷ উপযুক্ত সময়ে চ্যান্সেলরই জানাবেন তিনি আরেক মেয়াদের জন্য লড়বেন কিনা৷''
এদিকে কয়েকটি জার্মান গণমাধ্যম জানাচ্ছে, রবিবার সিডিইউর পরিচালনা পরিষদের বৈঠকের সময় ম্যার্কেল পুনরায় নির্বাচন করার আগ্রহের কথা জানাতে পারেন৷
সিএনএনের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের রাজনৈতিক প্রতিবেদক রুপার্ট ভিডারভাল্ড বলেন, ‘‘ব়্যোয়েটগেন ম্যার্কেলের পক্ষ হয়ে কথা বলেছেন, নাকি তাঁর অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, সেটি পরিষ্কার নয়৷'' এই সময়ে ম্যার্কেলের প্রার্থিতা ঘোষণা করা ‘পরিষ্কারভাবেই' যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার প্রতিক্রিয়া বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের এই সাংবাদিক৷
২০১৫ সালে জার্মানিতে এক মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে জার্মানদের কাছে অজনপ্রিয় হয়েছিলেন ম্যার্কেল৷ মার্কিন নির্বাচনের আগে এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৪ শতাংশ জার্মান চান ম্যার্কেল চ্যান্সেলর পদে থেকে যান৷ তবে গত সপ্তাহে সংখ্যাটি বেড়ে ৬০ শতাংশ হয়েছে৷
‘মুক্ত বিশ্বে'র নতুন নেতা ম্যার্কেল?
বার্তা সংস্থা এএফপি এই শিরোনাম দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পশ্চিমা বিশ্বের মূল্যবোধ রক্ষার দায়িত্ব এখন ম্যার্কেলের ঘাড়ে চাপছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন৷ ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট টিমোথি গার্টন গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, ‘‘আমি বলতে আনন্দ বোধ করছি যে, মুক্ত বিশ্বের নেতা এখন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷''
জার্মানির বামপন্থি দৈনিক টাৎস লিখেছে, ‘‘ম্যার্কেল... হঠাৎ করেই মুক্ত, গণতান্ত্রিক আর উদারপন্থি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছেন৷''
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষের আগে ইউরোপ সফরে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইংল্যান্ডে না গিয়ে জার্মানিতে আসার ঘটনাকেও একটি সংকেত হিসেবে দেখছে এএফপি৷ এই ঘটনাকে ‘ম্যার্কেলের কাছে ব্যাটন হস্তান্তর' বলে মনে করছে বার্তা সংস্থাটি৷ ইউরোপ সফরের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা ম্যার্কেলকে গত আট বছরে (সম্ভবত) তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক সহযোগী বলে উল্লেখ করেছেন৷
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ম্যার্কেলের দেয়া বক্তব্যের প্রশংসা হচ্ছে অনেক৷ ম্যার্কেল বলেছিলেন, ‘‘(সব মানুষের) জন্ম, গাত্রবর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, যৌন প্রবণতা বা রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও মানবমর্যাদার মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জার্মানি ও অ্যামেরিকার মধ্যে যোগসূত্র৷ এই মূল্যবোধের ভিত্তিতে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রস্তাব দিচ্ছি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জার্মানির বিদেশনীতির ভিত্তি ও ভবিষ্যতেও তাই থাকবে৷''
‘‘এই বক্তব্যের মাধ্যমে ম্যার্কেল বাস্তব বিশ্বের নেতার দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহ দেখালেন এবং ট্রাম্পকে মূল্যবোধের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলেন,'' বলে মনে করছে জার্মান দৈনিক ডি ভেল্ট৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)