রাণু মন্ডল ও সোশাল মিডিয়া
৩০ আগস্ট ২০১৯একাধিক ভিডিও ক্লিপ এখন ঘুরছে সোশাল মিডিয়ায়৷ এতদিন রেল স্টেশনে পড়ে থাকতেন যে মহিলা, দুটো গান শুনিয়ে ভিক্ষা করে, চেয়েচিন্তে, ঘোর অভাবের মধ্যে যাঁর দিন চলত, হঠাৎ তিনি সারা ভারতের শিরোনাম৷ প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে ওঠার পরই সবাই এখন পিছু ধাওয়া করছে রাণাঘাটের রাণু মন্ডলের৷ তারা গল্প চায়৷ স্থানীয় টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ক্যামেরা কাঁধে, মাইকের বুম হাতে পৌঁছে যাচ্ছেন বাড়িতে৷ প্রশ্ন করছেন, ‘আপনার মেয়ে এতদিন আপনাকে দেখত না, তাই তো?'মেয়ে টাকা পাঠাত জানতে চাইলে মেয়েকে মাঝরাস্তায় গিয়ে ধরছে— ‘মাসে কত টাকা করে দিতেন মাকে?'
এর পাশাপাশি রটছে গুজব৷ বুধবারের খবর, অভিনেতা সালমান খান ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়ে মু্ম্বই শহরে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন রাণুকে৷ পরদিনই সে খবর অস্বীকার করে বিবৃতি দিতে হচ্ছে এখন যিনি রাণুর সর্বক্ষণের সঙ্গী, সেই অতীন্দ্র চক্রবর্তীকে৷ রাণাঘাট স্টেশনের ছয় নম্বর প্ল্যাটফর্মে রাণুকে আবিষ্কারের কৃতিত্ব তাঁরই৷ বন্ধুদের সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্পগুজব করছিলেন অতীন্দ্র৷ পাশে বসে একটা গান গুনগুন করছিলেন রাণু৷ শুনে ভাল লাগে৷ সেই ‘এক পেয়ার কা নাগমা হ্যায়'গানটি রাণু একটু গলা ছেড়ে গান৷ মোবাইলে তার ভিডিও তোলেন অতীন্দ্র এবং ফেসবুকে পোস্ট করেন৷ ভাইরাল হয় সেই ভিডিও৷ মুম্বইয়ের বিখ্যাত সুরকার হিমেশ রেশমিয়ার নজরে পড়ে৷ তিনি তাঁর নতুন ছবির জন্য রাণুকে গান গাওয়ার প্রস্তাব দেন৷ উপযুক্ত সাম্মানিকের বিনিময়ে৷ তার ছবি, ভিডিও ফের ফেসবুকে ছড়ায়৷ সারা দেশে খবর হয়৷ আর তার পর থেকেই রাণুর দোষগুণ বিচারে তৎপর সোশাল মিডিয়া৷ বলা হচ্ছে, পুরোটাই হুজুগ! রাণু আদৌ গাইতে পারেন কি না, তার চুলচেরা বিচার চলছে৷
পরিস্থিতি এখন এতটাই বিরক্তিকর, যে অতীন্দ্র এবং তাঁর সঙ্গী তপন এখন রীতিমতো আগলে রাখছেন রাণুকে৷ সংবাদ মাধ্যমে কথা বলতেও দিচ্ছেন না৷ কারণ একের পর এক উদ্ভট প্রশ্নে রাণু বিরক্ত হচ্ছেন৷ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে উল্টো পাল্টা কথাও বলে বসছেন৷ অথচ রাণুর ভবিষ্যৎ এখন বেশ উজ্জ্বল৷ বিশ্ববিখ্যাত সুরকার এ আর রহমানের স্টুডিও থেকেও ডাক পেয়েছেন রাণু৷ হিমেশ রেশমিয়া সম্মতি দিলে সেখানেও গান গাইবেন৷ মু্ম্বই থেকে ডয়েচে ভেলেকে জানালেন অতীন্দ্র৷
তা হলে যাঁরা বলছেন রাণু গাইতে পারেন না? যাঁরা বলছেন পুরোটাই হুজুগ? সংগীতকার, গায়ক নচিকেতা খুব চাঁচাছোলা ভাষায় বললেন, যত লোক এই মুহূর্তে গান গাইছে, তার ৭০ শতাংশই গান না শিখে গাইছে৷ সেখানে রাণু দারুণ গাইছে৷ বেসুরো তো গাইছে না! অভিমত নচিকেতার৷
তার পরেও খুশি নয় সোশাল মিডিয়ার খাপ পঞ্চায়েত৷ কিছুতেই যেন মেনে নেওয়া যাচ্ছে না রেল স্টেশনের বাসিন্দা এক হতদরিদ্র মানুষের এই অবাক করা সাফল্যকে৷