রাশিয়ায় বেলুগা তিমি বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ
১০ অক্টোবর ২০১৭রাশিয়ার দুই চলচ্চিত্র পরিচালকের কাজ শুরু হয়েছিল কৃষ্ণ সাগরে৷ সেখানেডলফিন ও বেলুগা বা সাদা তিমির ছবি তোলেন তাঁরা৷ তাদের গানের গলা কী সুন্দর! শিশু বয়সেই তাঁরা এসব প্রাণীর সঙ্গে সাঁতার কেটেছেন৷ এখন এই প্রাণীর সংখ্যা মারাত্মক হারে কমে চলেছে৷ প্রায়ই বেলুগা অ্যাকোয়েরিয়ামে বিক্রি করা হয়ে থাকে৷
তারা রাশিয়ার উত্তর মহাসাগরে বড় পরিবারে বসবাস করে৷ খুবই বুদ্ধিমান ও সামাজিক প্রাণী তারা৷ দুই পরিচালক মনে করেন, এই প্রাণীদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছোট জায়গায় পুরে দেওয়া বড় অপরাধ৷ তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন যে, কৃষ্ণ সাগর উপকূল ও চীনে একের পর এক ডলফিনেরিয়াম গজিয়ে উঠছে৷ ফলে নতুন বেলুগার চাহিদা বেড়েই চলেছে৷
এমন অ্যাকোয়েরিয়ামের চার দেয়ালে আটকে থাকা এই প্রাণীদের জন্য নারকীয় যন্ত্রণার কারণ৷ মুক্ত পরিবেশে বেলুগা দিনে কয়েকশ' কিলোমিটার সাঁতার কাটে৷ বন্দিদশায় ছোট জায়গার মধ্যে তাদের খেলা দেখাতে হয়৷ বুদ্ধিমান এই প্রাণীকে পতুলের মতো কাজে লাগানো হয়৷ তথ্যচিত্র পরিচালক টাটিয়ানা বেলি বলেন, ‘‘বন্ধ দরজা ও বেড়ার মধ্যে বেলুগা ও ডলফিনদের নিয়ে যা চলে, সেটা জানতে পারলে খুবই খারাপ লাগে৷ তার উপর তাদের সাহায্য করতে না পেরে আরও খারাপ লাগে৷''
দুই রুশ পরিচালক বিষয়টি নিয়ে খুবই তৎপর৷ ৪ বছর ধরে তাঁরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন৷ রাশিয়ায় যেসব জায়গায় বেলুগা ধরা হয়, কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও তাঁরা সেইসব জায়গায় গেছেন৷ তাঁরা এমন এক তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন, যা নিয়ে রাশিয়ায় তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ তথ্যচিত্র পরিচালক গায়ানে পেট্রোসিয়ান বলেন, ‘‘দেশের পূর্বাংশে যাত্রার অভিজ্ঞতা ছিল সবচেয়ে খারাপ৷ সেখানে যা দেখেছি, তা অবিশ্বাস্য৷ প্রাণীদের নতুন করে শিক্ষা দেওয়া হয়, তাদের উপর অত্যাচার চলে৷ ফলে বিশেষ করে পরিবহণের সময় অনেকে মারা যায়৷ কিন্তু কর্মীরা ভাবলেশহীন থাকেন৷ শুটিংয়ের সময়ে আমাদের বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে৷''
তা সত্ত্বেও ‘পোলার সার্কেল' বা মেরুচক্রের কাছে তাঁরা ছবি তুলতে পেরেছেন৷ সেখানে বিশেষ করে কমবয়সি ধূসর রংয়ের বেলুগা ধরার চেষ্টা চলে৷ কারণ, শুধু তাদেরই প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব৷ রং সাদা হয়ে গেলে নতুন করে কিছু শেখা সম্ভব নয়৷বড় তিমিগুলি তাদের শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তারা নিজেরাই জালে আটকে পড়ে৷ অনেক তিমি এভাবে মারা যায়৷ গায়ানে পেট্রোসিয়ান বলেন, ‘‘এইসব পুরানো জং-ধরা আধারে করে তাদের চীনে পাঠানো হয়৷ দিনের পর দিন তাদের বদ্ধ জায়গায় থাকতে হয়, প্রায়ই চরম উত্তাপের মধ্যে৷''
ওঠানামার সময়ে প্রায়ই প্রাণীদের ঘাড় ভেঙে যায়৷ ধূসর শাবকদের জন্য অ্যামিউজমেন্ট পার্কগুলি ৪০,০০০ থেকে ১ লক্ষ ইউরো দিতে প্রস্তুত থাকে৷ তাদের নিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চলছে৷
এর মধ্যে সেই চলচ্চিত্র রাশিয়ার সিনেমা হলে দেখানো হচ্ছে৷ ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও ক্যানাডার তথ্যচিত্র নির্মাতাদের মতো এই পরিচালকরাও এভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চান৷ সেখানে পশু সুরক্ষায় বিধিনিয়ম বেশ কড়া হয়ে উঠেছে৷
রাশিয়ার মানুষের এ বিষয়ে ধারণা নেই বললেই চলে৷ তাই এমন ছবি দেখেও তাঁদের প্রতিক্রিয়া অবাক করার মতো৷ একজন বলেন, ‘‘রাশিয়ায় এমন ছবি হওয়া ভালো, যাতে এমন অবিচার মানুষের সামনে তুলে ধরা যায়৷ কিন্তু বড় সমস্যা হলো এখানে তিমি রাখার কোনো বিধিনিয়ম নেই৷ এমন বুদ্ধিমান প্রাণী রাখার জন্য সরকারি নিয়ম না থাকা সত্যি খুবই খারাপ৷''
দুই চলচ্চিত্র নির্মাতা ঠিক সেটাই চান৷ বেলুগা ধরা বন্ধ করতে ও অ্যাকোয়াপার্কে তাদের রাখতে স্পষ্ট আইন প্রণয়ন দেখতে চান৷
এই চক্র ভাঙতে কয়েক বছর লেগে যাবে৷ রাশিয়ার সংবাদপত্রগুলিতে এই প্রথম বেলুগাদের করুন অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ তবে এই তথ্যচিত্র আপাতত হাতে গোনা কয়েকটি বিশেষ সিনেমা হলে প্রদর্শিত হচ্ছে৷
বির্গিট ভিয়রনিশ/এসবি