অ্যাসিড আক্রমণে আতঙ্কে বাংলাদেশিরাও
২৭ জুলাই ২০১৭লন্ডনে ক্রমেই বেড়ে যাওয়া অ্যাসিড আক্রমণে সত্যিই ব্যাপক আতঙ্কে রয়েছেন সেখানকার অনেকে৷ বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকায় দুই বাংলাদেশির উপর হামলার পর এই আতঙ্ক আরো ছড়িয়ে যায়৷ অনেকেই মনে করছেন ধারাবাহিক এই হামলা বিদ্বেষপ্রসূত৷
এখানকার, বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশিরা মোটামুটি আতঙ্কেই আছেন বলে জানান লন্ডন শহরের বাসিন্দা অজন্তা দেব রায়৷
ডয়চে ভেলেকে অজন্তা বলেন, কারণ হচ্ছে যে ক'টা হামলা হয়েছে, বেশিরভাগই হয়েছে এশিয়ান ব্রাউন স্কিনের মানুষদের উপর বা মুসলিমদের উপর৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, এটা রেসিয়ালি মটিভেটেড বা ইসলামোফোভিক আক্রমণ৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষ করে দেখলে তো আর ধর্ম বোঝা যায় না, তাই ধর্ম নির্বিশেষে সবাই আতঙ্কে আছে৷''
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, গতকাল বিকেল বেলা কয়েকজন বন্ধু মিলে বের হয়েছি৷ তেল নিতে বা সিগনালে গাড়ি কয়েকবারই থামাতে হয়েছে, তখন আমরা এতটাই আতঙ্কিত ছিলাম যে, বারবার বলছিলাম, জানালার কাচটা তুলে দাও৷ জানালা খোলা থাকলেই মনে হচ্ছিল, কখন কী ঘটে যায়৷ তিনি জানান, ‘‘পথ চলতে চলতেই আশেপাশে দৃষ্টি চলে যায়, হুডি পরে কেউ হেটে গেলো কিনা৷''
লন্ডনে খুবই সহজলভ্য অ্যাসিড বিক্রিতে সম্পতি কিছুটা কড়াকড়ি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা ঘোষণা এসেছে, পুলিশ থেকে জরুরি সার্ভিসকে এক হাজার ‘অ্যাসিড এটাক কিটস' দিয়েছে৷ পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে পানির বোতল রাখতে বলেছে৷ অ্যাসিড বিক্রির ব্যপারেও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে৷
তিনি জানান, ‘‘সাধারণত খুবই সহজে অ্যাসিড পাওয়া যায়৷ তবে সম্প্রতি একটু কড়াকড়ি হয়েছে৷''
আতঙ্কে থাকলে অজন্তা আস্থা রাখছেন ব্রিটেনের পুলিশ ও সরকারের উপর৷ ব্রেক্সিটের পর বর্ণবাদী এ ধরনের আচরণ বাড়লেও সরকার শেষ পর্যন্ত সামলে নিবে বলে তাঁর প্রত্যাশা৷
স্ত্রী সন্তানসহ লন্ডনে থাকা তামিম ইকবালকে অ্যাসিড নিয়ে একদল যুবক ধাওয়া করেছিল বলে যে খবর বের হয়, সেটা বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়৷ হঠাৎ দেশে ফিরে আসা তামিম অবশ্য এই ধরনের ঘটনা অস্বীকার করেছিলেন৷
এর কয়েক দিনের মধ্যে লন্ডনে ফের অ্যাসিড হামলা হলে সেটা নিয়ে অনেকে কথা বলেন৷
শামীমা সোবহান নামে একজন ফেসবুকে বলেন, ‘লন্ডনে অ্যাসিড হামলা দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ মুসলিম, নন মুসলিম, হেজাবধারী, হেজাব বিহীন, নারী বা পুরুষ নানান ধরনের মানুষের উপর অ্যাসিড হামলা হচ্ছে৷ ইউটিউব, নিউজ পোর্টাল – এ সব দেখেশুনে কোনো উপসংহারে আসা যাচ্ছে না যে কী কারণে এই হামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে উক্ত ভদ্র জাতির মাঝে৷ যে যার মতো করে এর ব্যাখ্যা করেছে, যা কখনো বিশ্বাসযোগ্য বা কখনো অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে৷'
এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাব জানিয়ে তিনি বলেন, থাকুক সব কিছু গোপনে, তাদের সুট-কোর্টের স্মার্টনেস অমলিন থাকুক৷ কিন্তু যে কথাটি বলতেই হয়, এই অ্যাসিডদগ্ধ মানুষগুলি যে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ফুটন্ত আগুনের তাপে দগ্ধ হচ্ছে তার কারণ হিসাবে কী বলবে লন্ডন?
অ্যাসিড নিক্ষেপ বন্ধ না হলে তারাও হয়ত একদিন বিতর্কিত হবে বিশ্বের চোখে৷ সর্বশেষ মঙ্গলবার দুই বাংলাদেশির উপর হামলার পরও সরব হয়েছেন অনেকে৷
সাংবাদিক আফসান চৌধুরী ফেসবুকে একটি খবর শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘যুক্তরাজ্য যেখানে সেখানে অ্যাসিড আক্রমণে লক্ষবস্তু বাংলাদেশিরা৷ হাই কমিশন কি সেখানে কিছু করছে?'