সুইডেনে চিংড়ি সাফারি
২২ ডিসেম্বর ২০১৫সুইডেনের পশ্চিম উপকূল আজও বন্য, আদিম৷ ফিয়ালবাকা নামের গ্রামটি জেলেদের গ্রাম, কিন্তু তার গলদা চিংড়ি সারা দেশে বিখ্যাত৷ হেমন্ত হল চিংড়ির মরসুম৷ পেয়ার কার্লসন-এর মতো জেলেদের ব্যস্ততার সময়৷ তিনি বলেন, ‘‘চিংড়ির মরসুম শুরু হলে এখানে জমজমাট! কেননা যাদের এখানে ছুটি কাটানোর বাংলো আছে, তারাও এই সময় দু'-এক সপ্তাহের জন্য এখানে আসেন, চিংড়ি মাছ ধরতে আর চিংড়ি মাছ খেতে৷''
সুইডেন ছাড়া ইউরোপেয়ার অন্যান্য দেশ থেকেও আসেন গলদা চিংড়ির ভক্তরা৷ পেয়ার কার্লসন এই টুরিস্টদের জন্য গত দশ বছর ধরে তাঁর ‘চিংড়ি সাফারি' বা চিংড়ি ধরার অভিযানের ব্যবস্থা করেছেন৷ দু'ঘণ্টার টুর৷ এবার তাঁর নৌকায় রয়েছেন দক্ষিণ সুইডেনের একটি শহরের এক আইনজীবী কার্যালয়ের দশজন উকিল৷ সূর্যালোকের এখন কোনো অভাব নেই৷ স্টকহোমের ‘শেয়ারেন' দ্বীপপুঞ্জের মাঝখান দিয়ে ঘোরাফেরার সেরা সময় এটি৷ পেয়ার কার্লসন ছেলেবেলা থেকে এখানে মাছ ধরছেন, এলাকাটাকে খুব ভালোভাবে চেনেন৷ পেয়ার জানালেন: ‘‘আমরা এখান দিয়ে বেরব৷ এটা হল ফিস্কহলেম, মৎস্যদ্বীপ, সেখান থেকে আমরা যাব দক্ষিণে৷ সব মিলিয়ে দু'ঘণ্টা৷''
ঝাঁপ ফেলে চিংড়ি তোলা
বয়া দিয়ে দিয়ে যে সব জায়গায় পেয়ার চিংড়ি ধরার ঝাঁপ ফেলেছেন, সেগুলো চিহ্ন করা আছে৷ এখানে বিশ মিটার পানি, কাজেই ঝাঁপ টেনে তোলাও একটা পরিশ্রমের কাজ৷ ঝাঁপে চিংড়ি পড়েছে৷ তবে এই চিংড়িটা প্রাণে বেঁচে যাবে৷ পেয়ার বললেন: ‘‘এটা মেয়ে চিংড়ি৷ কাজেই ছেড়ে দিতে হবে৷''
সুইডেনের মাছ ধরার আইন সেইরকম৷ ঝাঁপ আবার জলে ফেলা হল, নতুন করে টোপ দিয়ে৷ পেয়ার জানালেন: ‘‘এটা হল সল্টেড হেরিং, চিংড়িরা এর গন্ধ পায়৷ হেরিং খাবার লোভে ঝাঁপির ভেতরে ঢুকে আর বেরতে পারে না৷''
ঝাঁপ আবার জলে ফেলার আগে পাইলটের কেবিন থেকে সংকেতের অপেক্ষায় থাকেন পেয়ার৷
নৌকা চালাচ্ছেন তাঁর ভাই লার্স৷ লার্স একো সাউন্ডিং দিয়ে সমুদ্রবক্ষের উপর নজর রেখেছেন৷ লার্স জানালেন, ‘‘সাগরের তলায় জমির ওপর নজর রাখতে হয়, চিংড়িরা যেখানে থাকে, পাথরের তলায়৷'' পেয়ার কার্লসন ঠিক সেখানেই তাঁর ঝাঁপটা আবার নামিয়ে দিলেন৷ পরেরটাতেও চিংড়ি পাওয়া গেল - এবার একটা মদ্দা৷ শুধু মেপে দেখতে হবে, চিংড়িটা ঠিকমতো বড় হয়েছে কিনা৷ পেয়ার বললেন: ‘‘চোখের পেছন থেকে লেজ পর্যন্ত আট সেন্টিমিটার হতে হবে৷ এই চিংড়িটা ৮২ মিলিমিটার, কাজেই ঠিক আছে৷'' এর চাইতে ছোট চিংড়িগুলোকে আবার ছেড়ে দিতে হবে, সুইডিশ আইনে তাই বলে৷ এই চিংড়িটা যাবে মাছের বাজারে৷ সেখানে এর দাম উঠবে প্রায় ১০০ ইউরো৷
আজকে উঠেছে পাঁচটা চিংড়ি৷ এই চিংড়ি সাফারিতে পেয়ার-এর নৌকায় ছিলেন দশজন৷ কাজেই কেউ অভুক্ত থাকবেন বলে মনে হয় না৷