1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইসিইউ বেডের সংকট কেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ মার্চ ২০২১

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে বাড়ছে আইসিইউ সংকট৷ ঢাকার সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই৷ সাধারণ কোভিড বেডে অক্সিজেন এবং হাই ফ্লো জোন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3r3Q8
চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালের আইসিইউ বেড
ছবি: bdnews24

বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলে জানা গেছে, আগে প্রতি ১০ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে সর্বোচ্চ একজনের আইসিইউ প্রয়োজন হত৷ এখন প্রয়োজন হয় তিন জনের৷ আর সংক্রমিত বড় একটি অংশের অক্সিজেনের মাত্রা শুরুতেই ৭০-৮০ ভাগে নেমে যাচ্ছে৷ স্বাভাকিভাবে এটা ৯৭ ভাগের উপরে থাকে৷

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিষ্ট্রার ডা. মোক্তাদির ভুঁইয়া বলেন, ‘‘এবার সিরিয়াস রোগীর সংখ্যা বেশি৷ আর রোগীও প্রতিদিনই বাড়ছে৷ আইসিইউ সাপোর্ট আগের চেয়ে বেশি লাগছে৷ কিন্তু  আইসিইউ বেড তো বাড়েনি৷’’

পরিস্থিতি কী?
মো. শফিউল্লাহ একজন সরকারি কর্মকর্তা৷ তার মা করোনায় আক্রান্ত৷ তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়ায় শনিবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ প্রথম দিনই তার আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হলেও একদিন পর তাকে আইসিইউ বেড দেয়া হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এবং আমাদের পরিবারের যারা আছেন তারা সবাই মিলে সব চ্যানেল ব্যবহার করে মায়ের জন্য আইসিইউর ব্যস্থা করেছি৷ কিন্তু অনেকেই তা পারছেন না৷ পারবেন কীভাবে এই হাসপাতালে আইসিইউ বেড মাত্র ১০টি৷’’ তিনি জানান কোনো আইসিইউ বেডই এখন আর ফাঁকা নেই৷ অনেক রোগীই প্রয়োজন হলেও আইসিইউ বেড পচ্ছেন না৷ চিকিৎসকেরাও অসহায়৷

করোনা রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে: ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক কর্নেল মো. নাজমুল হক

নুরুজ্জামান লাবু একজন সাংবাদিক৷ তিনি বুধবার সকালে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন করোনা রোগীর জন্য ঘরে ব্যবহার করার অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজ জানতে৷ তিনি জানান, তার ভাগ্নে করোনা আক্রান্ত, তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজ করছেন৷ হাসপাতালে না নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলোতে এখন রোগীদের ভিড়৷ আর সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নাই৷ আমাদের বাসার পাশে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম৷ তাদের করোনার জন্য দুই ধরনের বেড আছে৷ রেড এবং ইয়োলো৷ তাদের আইসিইউ আছে৷ ভর্তিতে তারা রেডের জন্য এক লাখ এবং ইয়োলোর জন্য ৫০ হাজার টাকা আগাম চায়৷ আর্থিক দিক বিবেবচনা করে তাই বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এসেছি৷ দেখি  কী হয়৷’’

করোনায় আইসিইউ বেড চিত্র:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে সারাদেশে এখন করোনা রোগীর জন্য আইসিইউ বেডের সংখ্যা ৫৪৯টি৷ আর আইসিইউ বেডে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা ৩২৩ জন৷ খালি আছে ২২৬টি বেড৷ স্বাস্থ্য অধিপ্তরের ২৪ মার্চের আগের ২৪ ঘন্টার হিসাব এটি৷ এই সাধারণ হিসাব দেখে করোনা রোগীদের আইউসিইউ বেডের সংকট চলছে তা বোঝা মুশকিল৷

ঢাকা শহরের চিত্রটি তুলে ধরলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে৷ ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ১০৩টি৷ তার মধ্যে খালি আছে মাত্র সাতটি৷ ২৪ ঘন্টা আগের এই হিসাব৷ ২৪ ঘন্টা পরে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বিএসএমইউ হাসপাতালে করোনা রেগীর জন্য কোনো আইসিইউ বেড খালি নাই৷

ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড ২৬৭টি৷ খালি আছে ৪৫টি৷
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে করোনার জন্য আইসিইউ বেড আছে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৪৫টি৷ খালি আছে ২৩টি৷
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে করোনার জন্য আইসিইউ বেড আছে ২৩৭টি৷ খালি আছে ১৫৮টি৷ তুলামূলকভাবে বেড খালি থাকার হিসেবে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রাম মহানগরী এবং চট্টগ্রামের চেয়ে দেশের বাকি এলাকার অবস্থা ভালো৷

ঢাকায় কোভিড হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত হাসাপতালগুলোতে করোনার জন্য আইসিইউ খালি নেই৷ যে সাতটি বেড খালি আছে সেগুলো বিশেষায়িত হাসপাতাল৷ ভিআইপিদের৷ বেসরকারি হাসপাতালে থাকলেও তা সাধারণের নাগালের বাইরে৷

এদিকে জানুয়ারির পর ধীরে ধীরে আইসিইউ বেডের সংখ্যা কমানো হয়েছে৷ জানুয়ারিতে সারাদেশে করোনার জন্য আইসিইউ বেডের সংখ্যা ছিলো ৬৮৮টি৷ আর এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪৯টি৷  কিন্তু এখন আইসিইউর চাহিদা বেশি৷

টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা যথাযথ হয়নি: ডা. লেনিন চৌধুরী

কেন এই পরিস্থিতি?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসেবে গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে আরো নতুন করে তিন হাজার ৫৬৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ২৫ জন৷ এপর্যন্ত মারা গেছেন আট হাজার ৭৬৩ জন৷ আর এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৮০৮ জন৷ গত ২৪ ঘন্টায় সংক্রমণের হার শতকরা প্রায় ১৩ ভাগ (১২.৯৭), যা উদ্বেগজনক বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷ গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করেনা রোগী সনাক্ত হয়৷

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, এবার করোনা সংক্রমণের  তীব্রতা আগের চেয়ে বেশি৷ অধিকাংশ রোগীর অক্সিজেন লাগছে৷ আর আগে প্রতি ১০ জনে একজনের আইসিইউ লাগত, এখন লাগছে তিন জনের৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউকে ভেরিয়েন্ট এবং আফ্রিকান স্ট্রেইনের জন্য এই পরিস্থিতি হতে পারে৷’’ আর এবার বয়স্কদের সাথে তরুণেরাও আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকরা৷ তিনি বলেন, ‘‘কেউ কেউ মনে করেছেন করোনা আর আসবে না তাই কোভিড আইসিইউর সংখ্যাও কমিয়ে ফেলা হয়েছে৷ আর করোনাকে আমরা সবাই মিলে অবহেলা করেছি৷ টিকা দেয়ার ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা যথাযথ হয়নি৷’’

ডা. মোক্তাদির ভুঁইয়া বলেন, ‘‘করোনার জন্য চাইলেই আইসিইউ বেড রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়৷ কিছু বেড কমানোও হয়েছে৷ সাধারণ বেডে রূপান্তর করা হয়েছে৷ তবে সরকার চাইলে বাড়ানো সম্ভব৷’’ গত বছর করোনার সময় আইসিইউ বেড বাড়ানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে তা বাড়েনি৷

ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক কর্নেল মো. নাজমুল হক জানান, ‘‘করোনা রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে৷ হাই ফ্লো জোন এবং হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে আমরা রোগীদের সুস্থ করার চেষ্টা করছি৷ তারপরও সম্ভব না হলে আমরা রোগী আইসিইউতে পাঠাই৷ চেষ্টা করছি আইসিইউর ওপর চাপ কমাতে৷’’

তিনি বলেন, শুরু থেকেই ঢাকা মেডিকেলে গুরুতর করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ তাই এখন যা পরিস্থিতি তা তারা সামলাতে পারছেন আগের অভিজ্ঞতার কারণে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান