আফগানিস্তান নিয়ে পশ্চিমা ভণ্ডামি অনেক হয়েছে
১৭ আগস্ট ২০২১আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান৷ এতে অনেক মানুষের হতভম্ব হওয়ার কারণ, তারা এখন বুঝতে পারছেন যে, ২০ বছর আগে তাদের সরকারগুলো মানবাধিকার রক্ষা করতে আফগানিস্তানে যায়নি, গিয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে৷
কিন্তু এখন রাজনৈতিক অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আসায় এবং খরচ-লাভের হিসাব যুক্তিসঙ্গত মনে না হওয়ায় তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে যেতে চেয়েছেন৷
মিথ্যায় ভর করা মিশন
আফগানিস্তান মিশন একটা বড় মিথ্যা ছিল৷ জো বাইডেন চান না, যে মিশন চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমলে চলেছে, সেটা পঞ্চম জনের সময়ও চলুক৷ মানবাধিকার? নারী অধিকার? গণতন্ত্র? মনে হচ্ছে, এখন আর এসব পশ্চিমাদের সমস্যা নয়, হঠাৎ করে এখন এগুলো আফগানদের নিজেদের সমাধানের বিষয় হয়ে উঠেছে৷ ‘‘আফগান নেতাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে,’’ সম্প্রতি বলেছেন বাইডেন৷ ‘‘তাদের নিজেদেরই তাদের জন্য লড়তে হবে, তাদের দেশের জন্য সংগ্রাম করতে হবে৷’’
প্রতারিত ও পরিত্যক্ত বোধ
কিন্তু বাইডেন তার বক্তব্যে এটা উল্লেখ করেননি যে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র শুধু তালেবান ও আল-কায়েদার সঙ্গে লড়তে আফগানিস্তানে যায়নি৷ আফগানদের গণতন্ত্র এনে দেয়ারও অঙ্গীকার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ আফগান নারীদের অধিকার রক্ষার কথাও বলেছিল তারা৷ কিন্তু এখন এটা পরিষ্কার যে, ঐ বক্তব্যগুলো শুধু ফাঁকা বুলিই ছিল; নারী অধিকার কিংবা গণতন্ত্র কোনোটাই মূল অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল না৷
আফগানিস্তানের যে নারীরা এতদিন তাদের অধিকারের জন্য লড়ছিলেন, তাদের এই আশ্বাস দেয়া হয়েছিল যে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সবসময় জয়ী হয়৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আবারও তাদের ২০০১ সালের আগের কালো সময়ে ফিরে যেতে হবে৷ এই নারীরা এখন নিজেদের প্রতারিত ও পরিত্যক্ত মনে করছেন৷ অনেক নারী অধিকার কর্মী এখন তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন৷
শরণার্থীদের গ্রহণ করতে হবে
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানির শরণার্থী নীতিও কম ভণ্ড নয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে লাখ লাখ আফগান ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন৷ এরপরও আফগানিস্তানকে ‘নিরাপদ দেশ’ চিহ্নিত করে ইউরোপে আশ্রয় নেয়া অনেক শরণার্থীকে দেশে পাঠানো হয়েছে৷ গ্রিস, তুরস্ক আর বলকান দেশগুলোতে অনেক আফগান করুণ অবস্থায় আছেন৷
এতদিন আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের সমর্থন না করে জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্বের উচিত ছিল আফগান মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করা৷ নারী অধিকার কর্মীদের অর্থহীন অঙ্গীকারের বাণী না শুনিয়ে তাদের শঙ্কার কথা শোনা উচিত ছিল৷ আরো উচিত ছিল সেনাবাহিনী গড়ে তোলায় সহায়তা না করে ভবিষ্যৎ গড়তে আফগান মানুষদের সহায়তা করা৷
এখন কী হবে? পশ্চিমা বিশ্বে আশ্রয় নেয়া আফগান শরণার্থীদের এখন যত দ্রুত সম্ভব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ যে শরণার্থীদের আশ্রয় আবেদন ঝুলে আছে সেগুলোর দ্রুত নিস্পত্তি করতে হবে৷ আগামী কয়েক মাস ও বছরে যে আফগানরা আসবেন তাদেরও গ্রহণ করতে হবে৷ এভাবে অন্তত ইউরোপ আফগানিস্তানের মানুষের ঋণ কিছুটা পরিশোধ করতে পারবে৷
ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি/জেডএইচ