1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হাত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া উপায় নেই'

৮ আগস্ট ২০১৭

ঢাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক যানজট৷ কর্মঘণ্টার পাশাপাশি অপচয় হচ্ছে মূল্যবান জ্বালানি৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তে হাত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া উপায় নেই৷

https://p.dw.com/p/2hkIQ
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলে: রাজধানী ঢাকার যানজট পরিস্থিতির কথা তো আমরা সবাই জানি, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কি কোনো পথ নেই?

মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৪ হাজারের বেশি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য যানজট নিয়ন্ত্রণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি৷ এর জন্য আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়৷ ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চলাচলের জন্য উপযুক্ত তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ৷ অথচ এখানে গাড়ি চলছে ১০ লাখেরও বেশি৷ এই রাস্তায় একই সঙ্গে ইঞ্জিন চালিত ও অ-ইঞ্জিন চালিত যান একসঙ্গে চলে৷ তাছাড়া বেশ কিছু ইন্টারসেশনে আমাদের গঠনগত ত্রুটি আছে৷ এরপর চার রাস্তার ইন্টারসেকশন হলে একটি চালু রাখলে তিনটি বন্ধ করতে হয়৷ ফলে এসব রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়৷ এই ধরনের অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের আছে৷ আমরা রাস্তায় প্রসিকিউশন বাড়িয়েছি৷ আগে যেখানে দুই থেকে আড়াই হাজার প্রসিকিউশন হতো এখন সেখানে চার থেকে সাড়ে চার হাজার প্রসিকিউশন হচ্ছে প্রতিদিন৷ আমরা ভিডিও মামলার প্রচলন করেছি৷

‘ট্রাফিক আইনটি যত না বেশি এনফোর্স করার বিষয়, তার চেয়ে বেশি মানার বিষয়’

জনগণের অভিযোগ ট্রাফিক অব্যস্থাপনার কারণেই যানজট৷ আপনি কী মনে করেন?

এই অভিযোগ সত্য নয়৷ ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অব্যবস্থাপনা নেই৷ সামনে কোনো খালি জায়গা পেলেই সেদিকে আমরা গাড়ি যেতে দিচ্ছি, রাস্তাটা চালু রাখছি৷ কোনো গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে রেকার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ যত্রতত্র পার্কিং করলে মামলা দিচ্ছি৷ এনফোর্সমেন্টের পাশাপাশি রাজধানীর গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত মিটিং করছি৷

হাত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার যে প্রথা, সেটা কি কার্যকর না ক্ষতিকর?

রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় অনেকগুলো ত্রুটি আছে৷ আগেই বলছিলাম এই রাস্তায় একই সঙ্গে ইঞ্জিন চালিত ও অ-ইঞ্জিন চালিত যান একসঙ্গে চলে৷ তাছাড়া বেশ কিছু ইন্টারসেকশনে আমাদের গঠনগত ত্রুটি আছে৷ এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়৷ অন্যদিকে উন্নয়নমূলক অনেকগুলো কাজ চলছে৷ মেট্রোরেলের কাজ হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজ হচ্ছে৷ এ সব কারণে আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে৷ আমাদের ১০০টি পয়েন্টে সিগন্যাল লাইট আছে৷ এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে কিন এয়ার এন্ড সাসটেনেবল এনভারমেন্ট নামে একটি প্রকল্প৷ বিশ্বব্যাংক ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে এটা নিয়ে কাজ করছে৷ এটা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরিচালিত হবে৷ এখন সেটার কাজ চলছে৷ কয়েকমাসের মধ্যেই আমরা রিমোট কন্ট্রোল হয়ত হাতে পেয়ে যাব৷ তখন রিমোট কন্ট্রোলে ট্রাফিক সিগন্যাল চলবে৷ এখন সাময়িক সময়ে জন্য আমরা হাতে চালাচ্ছি৷ আগামী সেপ্টেম্বর থেকে সেন্সর সিস্টেমে এটা করার ব্যাপারে একটা কাজ শুরু হবে৷ জাইকা ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এটা করছে৷ চারটি সিগন্যালে তারা পরীক্ষামূলকভাবে এটা করবে৷ এটি কার্যকর বলে প্রতীয়মান হলে পরে সবগুলো সিগন্যালে সেটার বাস্তবায়ন করা হবে৷

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের জরিপ বেরিয়েছে, ঢাকায় গাড়ির গতি হাঁটার গতির প্রায় সমান৷ এতে ট্রাফিক ব্যবস্থা দুর্বলতা সম্পর্কেও বলা হয়েছে?

এখানে আমাদের কোনো দুর্বলতা নেই৷ ট্রাফিক ব্যবস্থার তিনটা সিস্টেম৷ এনফোর্সমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং৷ এনফোর্সমেন্টের কাজটা আমরা করি৷ এডুকেশনের কিছু কিছু কাজ আমরা করি৷ লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হয়৷ এখানে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কিছু ফল্ট থাকতে পারে৷ এর সঙ্গে অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার জড়িত৷ এনফোর্সমেন্টে আমাদের কোন গাফিলতি বা অমনোযোগ নেই৷

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত, তাদের সঙ্গে আপনাদের সমন্বয়টা কেমন?

আমাদের সমন্বয় ভালো৷ সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত সমন্বয় করে কাজ করছি৷ মাঝে মধ্যে কাজের গতি হয়ত কম-বেশি হয়৷ তবে সার্বিকভাবে আমাদের সমন্বয় ভালো৷

ঢাকা শহরে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা যেটা আছে সেটা কি পর্যাপ্ত, তারা কত ঘণ্টা ডিউটি করেন?

আমাদের চার হাজার সদস্য আছেন৷ আমরা তিন শিফটে কাজ করি৷ একজন সদস্য ৮ ঘণ্টা করে ডিউটি করেন৷ জনবলের সমস্যার কারণে তাদের অনেক সময় ১২ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়৷ এখন যে পদ্ধতিতে কাজ করছি তাতে আমাদের জনবল আরো বেশি হলে ভালো হয়৷ কিন্তু রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম চলে এলে এই জনবল দিয়েই আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারবো৷

অনেক সময় ট্রাফিক সদস্যদের অবহেলার চিত্র মিডিয়ায় দেখি৷তাদের বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়?

শুধু অবহেলা নয়, বীরত্বপূর্ণ কাজের খবরও আমরা মিডিয়াতে দেখি৷ যাদের বিরুদ্ধে অবহেলার খবর আসে, তাদের ক্ষেত্রে মিডিয়ার এই খবরগুলোকে আমরা রিপোর্ট হিসেবে বিবেচনা করে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি করি৷ এরপর সেখানে সে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ আর যারা ভালো কাজ করেন তাদেরও আমরা পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করে থাকি৷

ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করতে আপনার কোনো সুপারিশ আছে কি?

কয়েকটা বছর আমাদের ট্রাফিক আইনটাকে বেশি করে মান্য করতে হবে, কারণ মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজ শুরু হয়েছে৷ এই সময়টা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের৷ আমাদের আইন মানার সংস্কৃতি চালু করতে হবে৷ যারা আইন ভাঙছেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান কিন্তু অব্যাহত আছে৷ আমার মনে হয় ট্রাফিক আইনটি যত না বেশি এনফোর্স করার বিষয়, তার চেয়ে বেশি মানার বিষয়৷ আমাদের জনগন যদি সচেতন হন, আইন মান্য করেন তাহলে এই মধ্যবর্তী সময়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা আমরা আরো ভালো করতে পারব৷ আমাদের তো অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে৷ আমরা তো এখনই ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে পারব না৷ তবে যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখার যে প্রক্রিয়া সেটা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে৷

আপনি কি সবসময় ট্রাফিক আইন মেনে চলেন? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

 

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য