1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক পুলিশের অনেক কাজ

৪ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশ পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, মামলা গ্রহণ, বিচারে সহায়তা, সড়ক শৃঙ্খলা ও ভিআইপি নিরাপত্তা-প্রটোকলসহ অনেক দায়িত্ব পালন করে৷ করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও৷

https://p.dw.com/p/2oedx
বাংলাদেশের পুলিশ
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo

সারা দেশে ৬৩৩টি থানার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে বাংলাদেশ পুলিশ৷ পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে পুলিশের ইউনিটগুলো হলো: রেঞ্জ পুলিশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), ব্যাটেলিয়ন পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ৷ বিভাগীয় শহরগুলোতে কাজ করে মেট্রোপলিটন পুলিশ৷ এর বাইরে পুলিশ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও পুলিশ হাসপাতাল আছে৷ বহুল আলোচিত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র‌্যাব-ও পুলিশের আন্তর্গত৷ এ রকম আরেকটি হলো আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন বা এপিবিএন৷

হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বিশেষ বিভাগ কাজ শুরু করে৷ ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিট' নামের এই বিভাগটি এখন সারাদেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে৷ রয়েছে ‘সোয়াত' নামের ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম'-ও৷ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে তারাই মূল অভিযান পরিচালনা করে থাকে৷

এছাড়া সক্ষমতা বাড়াতে যুক্ত হয়েছে ‘কমান্ডো ইউনিট'৷ এরই মধ্যে এই ইউনিটের জন্য ৪০ জন সদস্যকে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে৷ আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশেই শুরু হচ্ছে নিয়মিত কমান্ডো ট্রেনিং৷ পুলিশের আইজি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রথমে মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জ এবং পরে জেলা পুলিশেও পৃথক কমান্ডো ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে৷ যে ৪০ জন চৌকস পুলিশ সদস্যকে কমান্ডো ট্রেনিং দেয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন নারী সহকারী পুলিশ সুপারসহ পাঁচজন নারী সদস্য রয়েছেন৷

পুলিশ সদস্যদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এর জন্য পুলিশের আলাদা ট্রেনিং ইন্সটিটিউট আছে৷ এফবিআইসহ বিশ্বের উন্নত দেশে পুলিশ সদস্যরা প্রশিক্ষণ পান৷ আবার ঐ সব দেশ থেকে প্রশিক্ষক এসেও প্রশিক্ষণ দেন বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশ পুলিশ আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল-এর সদস্য৷ তাই পুলিশ সদর দপ্তরে আছে ইন্টারপোল ডেস্ক৷ এই ডেস্কের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় ছাড়াও নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এর বাইরে বাংলাদেশ পুলিশে এখন ফরেনসিক, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, পোস্ট ব্লাস্ট ইনভেস্টিগেশন, ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন, নিউ টেকনিক অফ ইনভেস্টিগেশন, কল ডায়ালিং রেকর্ড (সিডিআর), বেসিক ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ও কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এ সব প্রশিক্ষণ হয় ‘নিড অ্যাসেসমেন্ট' করে৷

বাংলাদেশে এখন পুলিশের মোট জনবল এক লাখ ৯৫ হাজার ৫২০ জন৷ জাতিসংঘের মান অনুযায়ী শান্তির সময় নাগরিক এবং পুলিশের আদর্শ অনুপাত হলো ৪০০:১৷ কিন্তু বাংলাদেশে এই অনুপাত বর্তমানে ৮২২:১৷ আর বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের শতকরা ৭ ভাগ এখন নারী৷

১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে অংশ নিচ্ছেন৷ মিশনে নারী পুলিশ যুক্ত হয় ২০১০ সাল থেকে৷ শান্তি মিশনে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন৷ বর্তমানে জাতিসংঘের নয়টি মিশনে এক হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য কাজ করছেন৷ মিশনে তিন শতাধিক নারী পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন৷

১৯৯২ সালে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা অনুযায়ী, এসআই থেকে তদূর্ধ্ব পুলিশ কর্মকর্তারা ৯ এবং ৭ পয়েন্ট ৬২ বোরের পিস্তল ব্যবহার করছেন৷ অন্যদিকে বর্তমানে পুলিশ কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্যরা শটগান কিংবা চাইনিজ রাইফেল ব্যবহার করছেন৷ কিন্তু নতুন এক প্রস্তাবে এসআই থেকে তদূর্ধ্ব পুলিশ কর্মকর্তাদের ৯.৪, ০ পয়েন্ট ৪৫, ০ পয়েন্ট ৪০ বোরের পিস্তল ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে৷ থ্রি নট থ্রি (৩০৩) রাইফেল দিয়ে পুলিশের যাত্রা শুরু হলেও, পুলিশ এখন আর এই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না৷ প্রচলিত যানবাহনের বাইরে অপরাধ ও সহিংসতা বন্ধে এখন ‘আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার' বা এপিসি ব্যবহার করছে পুলিশ৷

তবে পুলিশের বিশেষ ইউনিটে যাঁরা কাজ করেন, সেই সদস্যদের হাতে ভারি অস্ত্রের পাশাপাশি ‘কর্নার শটগান' নামে একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র দেয়ার ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা চলছে৷ এ অস্ত্রের বিশেষত্ব হলো, শত্রুকে না দেখেও যে কোনো অবস্থান থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে টার্গেট করা যায়৷ শটগানের আকৃতির এ অস্ত্রে ‘মনিটর' লাগানো থাকায় দূর থেকে শত্রুপক্ষকে চিহ্নিত করা সহজ হবে বলে মনে করছে পুলিশ সদরদপ্তর৷ এছাড়া পর্যায়ক্রমে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের হাত থেকে লাঠি তুলে নেয়ার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছে৷

পুলিশের অপরাধ

পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ অবশ্য অপরাধেও জড়িয়ে পড়েন৷ এই অপরাধ কখনো হয় দায়িত্ব পালনের সময়, আবার কখনো দায়িত্ব পালনের বাইরে গিয়েও অপরাধ করার অভিযোগ আছে৷

এখন আমরা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করছি

২০১৬ সালে প্রায় ১৩ হাজার ৬শ' পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধ ও অপকর্মের অভিযোগ আনা হয়৷ এর সবগুলো ঘটনাই ঘটেছিল পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেলে৷ এরপর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ হাজার ১শ' জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে বলে খবর৷ এ সব অভিযোগ বেশিরভাগই কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে৷ এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তদন্ত হয়৷

সদর দপ্তরে কর্মরত পুলিশের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগই বেশি৷

পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেলের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭২১টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এই মামলাগুলোতে ৭৯৮ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ এদের মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই পুলিশের বিরুদ্ধে মোট ১২৮টি মামলা দায়ের হয়৷ অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পাঠায়৷ এতে ২০১২ সালের ১৫৬টি, ২০১৩ সালের ১০টি, ২০১৪ সালের ৫৩টি, ২০১৫ সালের ৭৩টি এবং ২০১৬ সালের ১৬টি অভিযোগ রয়েছে৷

‘পুলিশের জন্য একটি স্বতন্ত্র আইন প্রয়োজন’

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ সব অভিযোগের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক অভিযোগ রয়েছে গুমের৷ যার সংখ্যা ২৭টি৷ এর বাইরে ২৪টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের৷ পুলিশি হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ২০টি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ক্রসফায়ারের অভিযোগ রয়েছে ১২টি, ৭টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর৷ এখানেই শেষ নয়৷ সঠিক তদন্ত না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে চারটি, জমি ও সম্পত্তি দখলের অভিযোগ রয়েছে চারটি, চারটি অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজির আর ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে দু'টি করে৷ এছাড়া ঘুস, অর্থ আদায়, লুটপাট, গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার ও ভূমি দখলের অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে৷

অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিক জামালউদ্দিন মনে করেন, ‘‘পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক৷ কিন্তু সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা না পেলে মানুষ অসন্তুষ্ট হয়৷ এরপরও অবশ্য বিপদে মানুষ পুলিশের কাছেই ছুটে যায়৷ তবে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে৷ পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এখন নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে৷ মানবাধিকারেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ তাছাড়া পুলিশের কনেস্টবল পর্যায়েও এখন মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা যোগ দিচ্ছেন৷''

তিনি এও বলেন, ‘‘পুলিশের কেউ কেউ এখনও হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত৷ আগে জিডি করতেও টাকা লাগত৷ তবে এখন পরিস্থিতি অনেকেটা পাল্টাচ্ছে৷ থানায় জিডির জন্য ছাপানো ফরম আছে৷ সেটা পূরণ করলেই হলো৷ অবশ্য মামলার বাদি এবং আসামি – উভয় পক্ষের কাছ থেকেই অর্থ আদায়ের অভিযোগ আছে কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে৷''

‘পুলিশকে অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়’

বাজেট বৃদ্ধি

পুলিশে জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দও বাড়ছে৷ ২০০১-০২ অর্থবছরে বাজেটে পুলিশের জন্য বরাদ্দ ছিল ৯০০ কোটি টাকা৷ সেই বাজেট ২০১৬-১৭ সালে হয়েছে সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা৷ পুলিশে মোট ১৩ ধরনের বেতন স্কেল আছে৷ সর্বনিম্ন একজন পুলিশ কনেস্টবলের বেতন স্কেল ৯ হাজার টাকা আর সর্বোচ্চ পুলিশের আইজির বেতন ৮২ হাজার টাকা৷ পুলিশের আইজি পদটি সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার৷

পুলিশের কাজ

অপরাধ দমন এবং তদন্তই পুলিশের প্রধান কাজ৷ আর এ কাজ করতে গিয়ে পুলিশকে মামলা গ্রহণ, মামলার তদন্ত, আসামি গ্রেপ্তার, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল এবং বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে হয়৷ পুলিশের অভিযোগপত্রের ওপরই মামলার বিচারের ফল বহুলাংশে নির্ভর করে৷ আদালতে যদি তদন্ত অনুযায়ী সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করা না যায় তাহলে মামলা প্রমাণ এবং অপরাধীকে শাস্তি দেয়া কঠিন৷ তাই বিচার ব্যবস্থার সাফল্য পুলিশের সাফল্যের ওপরও নির্ভর করে৷

কিন্তু এই প্রধান কাজের বাইরে পুলিশকে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করতে হয়৷ দেশে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশের বড় একটি জনশক্তি ব্যস্ত থাকে৷ আইন প্রয়োগের চেয়ে আইন অমান্যকারীদের নিবৃত্ত করতেই পুলিশকে অনেক শক্তি খরচ করতে হয়৷ এর বাইরে ভিআইপিদের নিরাপত্তা, প্রটোকল, স্থাপনার নিরাপত্তার কাজেও ব্যস্ত থাকতে হয় পুলিশকে৷

সাধারণত সিআইডি বড় ধরনের অপরাধের তদন্ত করে৷ থানা-পুলিশের বাইরে এই সংস্থা সরাসরি তদন্ত কাজেই নিয়োজিত৷ নতুন প্রতিষ্ঠিত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশকে এফবিআই-এর আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে৷ এসবি আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছাড়াও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের নিয়ে কাজ করে৷

‘মামলার বাদি এবং আসামি – উভয় পক্ষের কাছ থেকেই অর্থ আদায়ের অভিযোগ আছে কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে’

শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশে বলতে গেলে নুতন৷ এরা বিশেষায়িত৷ বিশেষ ধরনের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত এরা৷ আর ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের চলাচল সুশৃঙ্খল করার  দায়িত্ব ছাড়াও ট্রাফিক আইন ও মটর ভেহিকেল আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা আদায় এবং শাস্তি দেয়ার কাজ করে৷ ট্রাফিক পুলিশে এখন নারীরাও কাজ করছেন৷ গত বছরের আগস্ট মাস থেকে ২২ জন নারী সার্জেন্ট স্কুটি নিয়ে ঢাকার রাস্তায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন৷

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশ কম৷ তার ওপর পুলিশকে অপরাধ দমন এবং মামলার তদন্ত ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আরো অনেক কাজ করতে হয়৷ তাই জনগণের প্রত্যাশা অনুয়ায়ী হয়ত আমরা সেবা দিতে পারি না৷ তবে আমরা চেষ্টা করি৷ আর এখন আমরা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করছি৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশে যদি কেউ অপরাধ করে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত দায়৷ এর দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না৷ পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে পুলিশ সদর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিটে সেই অভিযোগ করার ব্যবস্থা আছে৷ অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ হলে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা, এমনকি ফৌজদারি মামলাও দায়ের করি৷''

পুলিশের মাঠ পর্যায়ের ইউনিট থানার প্রধান হলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি৷ থানাতেই প্রধানত মামলা দায়ের ও তদন্ত হয়৷ দেশের একাধিক থানার ওসি হিসেবে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন অবসরপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর ইনতেজার রহমান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ না জনগণের, না ডিপার্টমেন্টের৷ পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলা যেন একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে৷ কোনো পুলিশ সদস্য ভালো কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়লে পুলিশ বিভাগ দায়িত্ব নেয় না৷ ফলে পুলিশকে অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়৷''

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পুলিশের আধুনিকীকরণ এবং সক্ষমতা বাড়াতে সরকার একটি পরিকল্পনা দিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে সারা দেশে কাউন্টার টেরোরিজম ও পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট গঠন৷ পুলিশ এভিয়েশন ইউনিট, বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোয় পুলিশ নিয়োগ ও ডিজিটালাইজড ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা৷ পাশাপাশি যুগোপযোগী তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ, উন্নতমানের অস্ত্র ও গাড়িসহ লজিস্টিক সাপোর্ট, গোয়েন্দা তথ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রযুক্তিগত তদন্ত ব্যবস্থার প্রসার, ভবন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন৷ এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশে নেয়া হচ্ছে নতুন আরও ৫০ হাজার জনবল৷ পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে অত্যাধুনিক অস্ত্র, প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ, দেশে ও বিদেশে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনে হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ব্যবহারেরও অনুমতি প্রদানের কথাও ভাবা হচ্ছে৷

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশকে একটি সত্যিকারের পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে৷ তাদের ‘ফাংশনাল অটোনমি' দিতে হবে৷ বাংলাদেশ পুলিশ চলে বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশন দিয়ে৷ কিন্তু আমি মনে করি পুলিশের জন্য একটি স্বতন্ত্র আইন প্রয়োজন৷ সেই আইনের খসড়াও হয়েছিল, কিন্তু সেটা সেভাবেই পড়ে আছে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে কাজ করতে হলে তার প্রশিক্ষণ, যানবাহন, সরঞ্জাম ইত্যাদি প্রয়োজন৷ এগুলো তার স্বাধীন এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার অন্যতম শর্ত৷ আমি আইজিপি থাকাকালে পুলিশ বিভাগের সংস্কারের জন্য অনেক কাজ হয়েছিল৷ তার অল্প কিছু বাস্তবায়নও হয়েছে৷ তবে অধিকাংশই পড়ে আছে সরকারের কাছে৷''

ব্রিটিশ পুলিশ থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের জন্ম৷ ১৮৪০ সালে ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশ এলাকায় যে পুলিশি ব্যবস্থা চালু করে, তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশীয়দের দমনপীড়ন করা৷ তাদের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা৷ পাকিস্তান আমল পেরিয়ে আজকের বাংলাদেশের পুলিশ এখন ভিন্ন মাত্রার৷ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনী রাজারবাগে প্রথম প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলে৷ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ৩০৩ রাইফেল নিয়ে৷ তাই এই পুলিশ স্বাধীন দেশের পুলিশ৷ তাঁরা জনগণের বন্ধু হবে, এটা আশা করাই তো স্বাভাবিক৷

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য