1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, শিথিলতায় বাড়বে বিপদ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

প্রায় এক বছর দাপট দেখানোর পর ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে আসছে করোনা৷ সংক্রমণ ও দৈনিক মৃতের সংখ্যা কোনো কোনো দিন থাকছে শূন্যের কাছে৷ যদিও গ্রাফের ওঠানামা চলছেই৷ বাংলা-সহ গোটা ভারত কি বিপন্মুক্ত হবে অবশেষে?

https://p.dw.com/p/3pCcH
কলকাতা
ছবি: Payel Samanta/DW

গত বছর জানুয়ারিতে ভারতে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিস পাওয়া যায়৷ তারপর গোটা দেশে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারীর জাল৷ অজানা ভাইরাসের সামনে অসহায় মানুষ মারা গিয়েছে৷ সংক্রমণ রুখতে করতে হয়েছে লকডাউন৷ গোটা বিশ্বের মতোই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত৷ নতুন বছরের মুখেই দেখা যাচ্ছিল, ভাইরাস সংক্রমণের হার ক্রমশ কমছে৷ ফেব্রুয়ারির গোড়ায় যেন কাঙ্খিত সময় এসে উপস্থিত৷ এপ্রিলের পর প্রথম মৃত্যুহীন দিন দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ৷ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুই দিন কলকাতায় কেউ মারা যাননি৷ ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে আক্রান্ত ১৯৪ জন, মৃত দুই জন৷ পরের দিন আক্রান্ত ১৯৭, কলকাতায় কেউ মারা যাননি৷ ৭ ফেব্রুয়ারি আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৩ জন, মারা যান পাঁচ জন৷ ৮ ফেব্রুয়ারি আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে, ১১৯ জন৷ জেলায় দুই জনের মৃত্যু হলেও কলকাতায় শূন্য৷

কিছু দিন ধরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে শুধু কমছে না, ভারতের রাজ্যগুলো মোটের উপর একই ছবি৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, গত দিন দশেকে সাতটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি৷ আর ৮ ফেব্রুয়ারি দেখা গিয়েছে, ১৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল  মারণ ভাইরাসে মৃত্যু শূন্য৷ দিল্লিও পেয়েছে মৃত্যুহীন দিন৷ এই পরিস্থিতি স্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ নীতি আয়োগের প্রধান ভিকে পলের বক্তব্য, ‘‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে, এটা খুবই স্বস্তির খবর৷ তবে সেজন্য অসতর্ক হলে চলবে না৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে৷’’ এই সব তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে একটি সঙ্গত জিজ্ঞাসা, আমরা কি করোনা ভাইরাসকে অবশেষে পরাজিত করতে পারলাম?

সংক্রমণ যতটা হতে পারত, ততটা হয়নি: ডা. অমিতাভ নন্দী

ইউরোপ ও আমেরিকায় যখন করোনার নয়া স্ট্রেন আবার তাণ্ডব চালাচ্ছে, ফের লকডাউন করতে বাধ্য হচ্ছে তারা, সেখানে ভারতে সাফল্যের কারণ কী? এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি উঠে আসছে, তা হল গোষ্ঠীগত প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ অর্থাৎ একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজে থেকেই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে৷ সে কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে৷ এছাড়া কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে দেশের একটা বড় অংশের মানুষ যথেষ্ট সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে৷ এই নিয়মানুবর্তিতা কাজে লেগেছে৷ ডাব্লুএইচও-র প্রাক্তন পরামর্শদাতা ও সিনিয়র ভাইরোলজিস্ট ডাক্তার অমিতাভ নন্দী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সবাই মাস্ক পরেননি৷ স্যানিটাইজার ব্যবহার করেননি৷ এটা যেমন ঠিক, তেমন অনেকে করেছেন৷ যদি ধরে নিই ৫০ শতাংশ মানুষও করেছেন, তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে৷ সংক্রমণ যতটা হতে পারত, ততটা হয়নি৷ এখন তাই মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে৷ তবে এতে আত্মতুষ্ট হওয়ার কারণ নেই৷ পরিস্থিতি যে কোনো দিন বদলাতে পারে৷’’

ভাইরাস বিশেষজ্ঞের এই মন্তব্যের সত্যতা মিলছে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে৷ গ্রাফের ওঠানামায় নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, বুধবার দেশে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১১ হাজার ৬৭ জন৷ কিন্তু বৃহস্পতিবারের হিসেবে ১২ হাজার ৯২৩ জন৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, উপসর্গ না থাকলে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানো হয় না৷ ফলে উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের হিসেব পাওয়া সম্ভব নয়৷ তাই আক্রান্তের সংখ্যা দেখে স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখালে ভুল হবে৷ ইতিমধ্যে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে টিকাকরণ৷ তার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার আগে টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না৷ তাই আক্রান্তের হার কমার সঙ্গে টিকা দেওয়ার সম্পর্ক না খোঁজাই ভালো৷ ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দীর বক্তব্য, ‘‘এখন কোভিডে সংক্রমণ কমেছে মানে আবার হঠাৎ বেড়ে যাবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ যে কোনো সময় লোকাল স্ট্রেন তৈরি হতে পারে৷ তখন ইউরোপের পরিস্থিতি আমাদের দেশে হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷’’