করোনায় কমছে দূষণ
১ এপ্রিল ২০২০করোনা আতঙ্কে ২১ দিনের লকডাউনে ভারত। বাজার-হাট থেকে অফিস-আদালত, বন্ধ সব কিছু। বন্ধ কারখানা। তারই মধ্যে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। এমন ভয়াবহ সময়েও কিছু আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। তাঁদের বক্তব্য, গত কয়েক বছরের মধ্যে যা দেখা যায়নি, শেষ সাত দিনে সে দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি বড় শহরের দূষণমাত্রা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে নানা রকম পাখি এবং কীটপতঙ্গ। সাধারণ সময়ে শহরাঞ্চলে যার দেখা মেলে না।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, রাজধানী দিল্লির বায়ুর গুণগত মান এখন 'ভাল'। গত কয়েক বছরের মধ্যে এমন ঘটনা কল্পনাও করা যায়নি। বস্তুত কয়েক মাস আগেও দিল্লির বায়ুর গুণগত মান 'অতি ভয়াবহ' বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। যে মানদণ্ডে ফেলে বায়ু দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তাতে বলা হয়েছিল, দিল্লির বায়ুর মান সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে ফেলতে পারে। শেষ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে রীতিমতো মাস্ক পড়ে রাস্তায় নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কয়েক দিনের লকডাউনে রাতারাতি তা বদলে গিয়েছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বহু দিনের মধ্যে দিল্লিতে এমন ঘটনা ঘটেনি। এখানে সাধারণ সময়ে বায়ুদূষণ কম বলে ধরে নেওয়া হয়, যখন বায়ুর মান 'অতি ভয়াবহ' থেকে সামান্য ভাল থাকে। বস্তুত, বায়ু দূষণের নিরিখে বিশ্বের সব চেয়ে দূষিত শহরগুলির অন্যতম দিল্লি। সেখানেই এখন নীল আকাশ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রাতে চোখে পড়ছে রাশি রাশি তারা, যা আগে ভাবা যেত না। যাঁরা আগে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য দিল্লি থেকে পাহাড়ে ছুটতেন, তাঁরা রাজধানীতে বসেই সেই আবহাওয়ার স্বাদ পাচ্ছেন। শুধু রাজধানী নয়, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসেব বলছে, দেশের ৯২টি শহরের দূষণমাত্রা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি শহরের বায়ুর মান 'ভাল' আর ৫১টি শহরের বায়ুর মান 'সন্তোষজনক'।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''যে কারণে লকডাউন চলছে এবং তার ফলে জীবনযাত্রা যে ভাবে ব্যাহত হয়েছে, তা মোটেই আনন্দের কথা নয়। ফলে যে কারণে দূষণের মাত্রা কমেছে, তাকে মোটেই স্বাগত জানাচ্ছি না। তবে এই ঘটনা একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিল, চাইলে দূষণ রোধের ব্যবস্থা করা যায়। আরও একটা কথা মনে রাখা দরকার, করোনা আসলে প্রকৃতির একটি বিদ্রোহ। এর থেকে পাঠ নিয়ে আমরা যদি দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এখনই কড়া পদক্ষেপ না নিতে পারি, তাহলে মানব সভ্যতা আরও দুর্গতির মধ্যে পড়বে। এই ঘটনা সেটা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল।''
একই কথা বলেছেন, পরিবেশকর্মী জ্যোতি পাণ্ডে লাভাকারে। তাঁর বক্তব্য, ''এই লকডাউনের ফলে অর্থনীতির ভরাডুবি শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ফলে দুঃসময়ের মুখোমুখি আমরা। তবে একই সঙ্গে আমরা বুঝতে পারছি, চেষ্টা করলে দূষণের মাত্রা কমানো যায়। দূষণ নিয়ন্ত্রণের ভাবনাটি খুব জরুরি। সেটা সারা বছর ধরে ভাবলে আজ হয়তো এই লকডাউনের প্রয়োজন হতো না। প্রকৃতির এই রূপ দেখতে হতো না।''
পরিবেশবিদদের একটি বড় অংশের দাবি, 'করোনা সন্ত্রাস' আসলে একরকম 'ওয়েক আপ কল'। তাঁদের বক্তব্য, দূষণ নিয়ে বহু আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত উন্নয়নের সামনে বহু প্রস্তাবই মুখ থুবরে পড়ে। কাজের কাজ হয় না। প্রকৃতি বুঝিয়ে দিল, এ বারেও ঘুম না ভাঙলে সামনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।