1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতা সুরক্ষিত, পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ

২৬ অক্টোবর ২০১৯

ভারতের সবচেয়ে সুরক্ষিত শহরের তকমা পেয়েছে কলকাতা৷ এটাকে নিজেদের সাফল্য বলে দাবি করছে পুলিশ-প্রশাসন৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ অনেক পিছিয়ে৷ বিরোধীরা এ জন্য দায়ী করছে রাজ্য সরকারকে৷

https://p.dw.com/p/3RywY
Indien | Kalkutta zur sichersten Stadt Indiens erklärt | Polizei
ছবি: DW/P. Samanta

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল ক্রাইম রিপোর্ট ব্যুরো(এনসিবি) সম্প্রতি ২০১৭ সালের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে৷ মেট্রো শহরের সঙ্গে দেশের প্রধান ১৯টি শহরের মধ্যে কলকাতাকে সবচেয়ে সুরক্ষিত শহর বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই রিপোর্ট অনুযায়ী গত কয়েক বছরে শহরে অপরাধের সংখ্যা ক্রমশ কমছে৷ ২০১৪ সালে অপরাধ হয়েছিল ২৬,১৬১টি৷ ২০১৭ সালে অপরাধের সংখ্যা ১৯,৯২৫৷ অপরাধের হার কমেছে ৩১.৩ শতাংশ৷ ২০১৬ সালের রিপোর্টে এই তালিকায় সবার ওপরে ছিল কোয়েম্বাটুর৷ কলকাতা সেই জায়গা নিয়েছে৷ এই শহরের পর তালিকায় রয়েছে কোয়েম্বাটুর, হায়দরাবাদ, কোঝিকোড় ও মুম্বই৷   

কেন্দ্রীয় সংস্থার রিপোর্টকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখছে কলকাতা পুলিশ৷ শহরের পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য, "প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও পুলিশকর্মীদের চেষ্টায় এই সাফল্য এসেছে৷ গত চার বছরে অনেক নতুন থানা তৈরি হয়েছে৷ মানুষ সহজে অভিযোগ জানাতে পারছে৷ আমরাও ব্যবস্থা নিতে পারছি৷” এছাড়া গড়ে উঠেছে মহিলা থানা৷ উৎসবের সময় পুলিশ রাস্তার মোড়ে মোড়ে গড়ে তোলে সহায়তা বুথ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই রয়েছে পুলিশ দফতরের ভার৷ এটাকে তাঁর সাফল্য হিসেবেই দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব৷ তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই কলকাতাকে নিরাপদ করা গিয়েছে৷ যদিও এনসিবির রিপোর্টকে রাজ্য প্রশাসনের সাফল্য হিসেবে দেখতে চাইছে না বিরোধীরা৷ এটাকে তারা কলকাতার ঐতিহ্য বলেই মনে করছে৷ সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন,‘‘কলকাতা ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী৷ এশিয়ার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এই শহরে গড়ে উঠেছে৷ এখান থেকেই আমরা পেয়েছি ছয়জন নোবেলজয়ীকে৷ এই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার আমরা বয়ে নিয়ে চলেছি৷ সে কারণেই কলকাতার অপরাধ প্রবণতা অন্যান্য শহরের তুলনায় কম৷’’

তন্ময় ভট্টাচার্য

কলকাতা রিপোর্টে সন্তোষজনক অবস্থায় থাকলেও সার্বিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা কিন্তু ভাল নয়৷ এনসিবি-র ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের তালিকায় অপরাধের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে তৃতীয় স্থানে৷ ২০১৬ সালে রাজ্যে ৪৬,৭২৩টি অপরাধ হয়েছিল৷ ২০১৭ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ৪৮,৬০৯৷ অপরাধের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের আগে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও বিহার৷ এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাম বিধায়ক তন্ময় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সাফল্য হলে পশ্চিমবঙ্গে এই হাল কেন? কলকাতাকে সুরক্ষিত রাখার কৃতিত্ব যদি এই সরকারের হয়, একই কৃতিত্ব ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারেরও রয়েছে৷ আদতে এই রাজ্যে এমনভাবে প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে যে, অপরাধ বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক৷’’ তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘শহর মানে একটা সরকার বা চারটে পুলিশ নয়৷ শহর মানে মানুষ৷ সুরক্ষার কৃতিত্ব তাঁদের৷’’

শাশ্বতী ঘোষ

নারী সুরক্ষার ক্ষেত্রে্ও কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা এনসিবির রিপোর্টে আলাদা৷ কলকাতা মহিলাদের জন্য নিরাপদ হলেও রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ অপরাধের তালিকায় তৃতীয়৷ ২০১৭-য় পশ্চিমবঙ্গে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা ৩০, ৯৯২৷ সে কারণেই শুধু কলকাতার সুরক্ষিত হওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত নন অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ৷ তিনি বলেন, ‘‘অন্য শহরের সঙ্গে তুলনা করলে কলকাতা অবশ্যই এগিয়ে৷ দিল্লিতে যে দৃষ্টিতে মহিলাদের দেখা হয়, এখানে নিশ্চয়ই তা হয় না৷ কলকাতা দিল্লির তুলনায় নিরাপদ হতেই পারে, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের শহরের তুলনায় সুরক্ষিত, এটা মনে হয় না৷’’ কলকাতার সিটি কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপিকা শাশ্বতী এই ধরনের রিপোর্ট তৈরির পদ্ধতি নিয়েও সন্দিহান৷ তাঁর মতে, ‘‘নারীদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনাও অভিযোগ দায়েরের মধ্যে ফারাক থাকে৷ ঘটনা ঘটলেও সেটা নথিভুক্ত নাও হতে পারে৷ তাই রিপোর্ট পুরো ছবিটা তুলে ধরে না৷’’ কলকাতায় প্রতিদিন চলাফেরার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, আমাদের রাস্তাঘাট খুব স্বস্তিদায়ক বলে আমার মনে হয় না৷ ধর্ষণ পর্যন্ত না গড়ালেও টিটকিরি থেকে শ্লীলতাহানি কিছু কমেনি৷ ভয়ংকর হিংসা না হলেও এসব সমস্যা থাকলে মেয়েরা নিরাপদে, স্বস্তিতে আছে কি করে বলব!’’

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য