‘কাটমানি' গানে বিতর্ক
২৪ জুন ২০১৯মমতা ব্যানার্জির প্রায় সমস্ত জনসভায় যাঁকে গান গাইতে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের সব কর্মসূচিতে যিনি থাকেন, সেই গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী ‘কাটমানি'ফেরত দেওয়া নিয়ে গান বেঁধেছেন৷ নিজের ইউ টিউব চ্যানেলে সেই গান আপলোড করার পর থেকেই হইচই! গানের প্রথম চার লাইন— ‘খেয়েছেন যারা কাটমানি, দাদারা অথবা দিদিমনি / এসেছে সময়.. ফেরত দিন, আসছে দিন!'
নচিকেতার এই গানটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল এবং সংবাদ মাধ্যমের আলোচনার খোরাক হয়ে ওঠার পরেই পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের বিজেপি সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় টুইট করেন— ‘মানুষের মনের কথা গানের মাধ্যমে সঠিক মাত্রার 'Satire'-এর তড়কা লাগিয়ে সকলের সামনে নিয়ে আসার জন্য নচিকেতা-দাকে আমার অশেষ ধন্যবাদ'
নচিকেতা অবশ্য বাবুলের এই টুইটের পর সোশাল মিডিয়ায় বাবুলের নাম না করে মন্তব্য করেন— ‘‘শুনেছি একজন গায়ক গানটি নিয়ে টুইট করেছেন৷ আমার এ নিয়ে কিছু বলার নেই৷ যাঁরা যা বোঝার বুঝেছেন৷ রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের দায়িত্ব তো আর রামকৃষ্ণের নয়!'' এবং বিজেপি গানটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে, এটা বুঝতে পেরেই নচিকেতার গানের ভিডিওর শুরু এবং শেষে যোগ করেছেন একটি বিজ্ঞপ্তি, যে— এই গান ভারতবর্ষের সকল ভণ্ড রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে৷
এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলে–কেও নচিকেতা একই কথা বললেন যে ‘‘এটা ভণ্ড রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে গাওয়া এবং লেখা গান৷ যাঁরা সৎ, তাঁদের এই গান শুনে উত্তেজিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷''
তবুও বিতর্ক ছড়াচ্ছে, কারণ একসময় মমতা ব্যানার্জির সমর্থক, এমন অনেকেই এখন সরকারের সমালোচনায় সরব৷ রাস্তায় ‘জয় শ্রী রাম' স্লোগান শুনে মুখ্যমন্ত্রীর তেড়ে যাওয়ার ঘটনায় চলচ্চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেন যেমন সর্বভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন- এই অসহিষ্ণুতা দেখিয়ে মমতা নিজেই নিজের কবর খুঁড়ছেন৷ সম্প্রতি হাসপাতালে কর্মবিরতির সময় ধর্মঘটি জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে মিছিল করেছেন সেই বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদরা, যাঁরা সবাই একটা সময় বামফ্রন্টের পতন, রাজ্য সরকারে পরিবর্তন চেয়ে মিছিল করেছিলেন৷ আজ তাঁদেরই আবার সাংবাদিক সম্মেলন করে জানাতে হচ্ছে, রাজ্যে যা চলছে, তাতে তাঁদের সায় নেই৷
এঁদেরই একজন, তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর চিত্রশিল্পী সমীর আইচ একটু একটু করে দূরত্ব তৈরি করতে শুরু করেন৷ আজ তিনি মনে করছেন, ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের শেষ ১০ বছরে যে অরাজকতা দেখা দিয়েছিল, তৃণমূল সরকারের আট বছরেই সেই অপশাসনের চিহ্ন সর্বত্র প্রকট৷ এবং বিজেপির মতো দলের পশ্চিমবঙ্গে উত্থানের কারণ কিন্তু মমতা ব্যানার্জির সরকারের ভ্রান্ত নীতি৷ ‘‘মানুষ তিতিবিরক্ত হয়ে গেছে এদের ধর্মীয় মেরুকরণের দিকটা দেখে৷'' ডয়চে ভেলে–কে বলেছেন সমীর আইচ৷ এবং এই বুদ্ধিজীবীদের আচরণে, বক্তব্যে একটা ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট৷ ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আরেক দফা পরিবর্তন আসতে চলেছে বলে ওঁরা অন্তত মনে করছেন৷