1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার চাল চুরি

১৩ এপ্রিল ২০২০

করোনাকে ছাপিয়ে আলোচনায় এখন ‘চাল চোর'৷ এ ধরনের ঘটনা তদন্তে খাদ্য মন্ত্রণালয় সোমবার একটি কমিটি করেছে৷ খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, কারা চাল বিক্রি করল এবং কারা দায়ী সেটা বের করবে ওই কমিটি৷

https://p.dw.com/p/3aqBS
ছবি: bdnews24.com

প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে ত্রাণ চুরির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলেছেন৷ চাল চুরি রোধে মাঠে নেমেছে মোবাইল কোর্ট, পুলিশ এবং র‌্যাব৷  আরেক দিকে সরকারি ত্রাণের ট্রাক আটক করে গরিব মানুষের ত্রাণ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে৷

তিন দিন আগে ব্র্যাকের প্রকাশিত জরিপে বলা হয় করোনার কারণে দেশের ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে এখন কোনো খাবার নেই৷ ২৯ শতাংশের ঘরে আছে এক থেকে তিন দিনের খাবার৷ চরম দারিদ্র্যের হার আগের তুলনায় ৬০ ভাগ বেড়ে গেছে৷

ব্র্যাকের জরিপ বলছে সরকারি ছুটি বা সামাজিক দূরত্বের কারণে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন অথবা তাঁদের কাজ কমে গেছে৷ আট শতাংশ মানুষের কাজ থাকলেও এখনও বেতন পাননি৷ 

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তীতুমীর

এই পরিস্থিতিতে দেশে তিন ধরনের খাদ্য সহায়তা চলছে৷ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় ভিজিএফ-ভিজিডি, ওএমএস, ১০ টাকায় চাল এবং হতদরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা, এই তিনটি ক্ষেত্রেই অনিয়ম আর চুরির অভিযোগে এখন সয়লাব৷ 

কত চাল চুরি হয়েছে
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত দুই সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন গরীব মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দের চুরি হওয়া দুই হাজার ১৭৪ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে৷ প্রতি বস্তায় সাধারণত ৫০ কেজি করে চাল থাকে৷ তবে চুরি হওয়া আরো ৫৫০ বস্তা চালের কোনো খোঁজ এখনো করতে পারেনি তারা৷ সবচেয়ে বেশি ৬৯৫ বস্তা চুরির চাল উদ্ধার হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে৷ পুলিশের হিসাবে গত দুই সপ্তাহে এইসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও  চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তবে সংবাদমাধ্যমে চাল চুরির যত ঘটনা প্রকাশ হয়েছে তার এক চতুর্থাংশের বেশির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ আবার চাল চুরির ঘটনা নিয়ে খবর প্রকাশ করায় দেশের কয়েকটি এলাকায় প্রভাবশালীদের হাতে মার খেয়েছেন সাংবাদিকেরা৷ তবে কয়েকটি ঘটনায় দলীয়ভাবে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ কয়েকজন চেয়ারম্যান, মেম্বারকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে৷

কোন ধরনের প্রকল্পের চাল চুরি
৬৪ জেলায় বিশেষ মানবিক সহয়াতা হিসেবে সরকার ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নয় হাজার ৪০০ টন চাল, চার কোটি ৭০ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্য কেনা বাবদ এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে৷

জানা গেছে, এইসব প্রকল্পের চাল ও ত্রাণ নানাভাবে চুরি করা হয়৷ ওজনে কম দেয়া, তালিকা অনুযায়ী না দিয়ে বিক্রি করে দেয়া, গায়েবী লোকজনের নামে বরাদ্দ দেয়া, স্বজন প্রীতির মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়ে সেখান থেকে একাংশ নিয়ে নেয়া হয়৷ তবে করোনায় যে মানবিক সহায়তা দেয়া হয় সেখানে চুরির সুযোগ সবেচেয়ে বেশি৷ কারণ এটা আকস্মিক এবং সরকার এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো ক্যাটাগরি করে দেয়নি৷ 

সাধন চন্দ্র মজুমদার

তদন্ত কমিটি ও খাদ্যমন্ত্রী
ত্রাণের এই বিপুল পরিমান চাল চুরির ব্যাপারে সরকার এখনো কোনো কিনারা করতে পারেনি৷ তাই চাল চুরির ঘটনা তদন্তে  খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কমিটির অন্য দুইজন সদস্য হলেন অতিরিক্ত সচিব মো. তাহমিদুল ইসলাম ও যুগ্ম সচিব মো. হাবিবুর রহমান হোছাইনী৷

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, ‘‘কী পরিমান চাল বেহাত হয়েছে তা আমরা এখনো নিশ্চিত নই৷ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাল ধরা পড়েছে৷ পুলিশ মামলা করেছে৷ এখন তদন্ত করে বের করা হবে আরো কারা জড়িত৷ সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ আমাদের মন্ত্রণালয়ের কেউ জড়িত কিনা তাও দেখা হচ্ছে৷’’ 

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যে চাল ধরা পড়েছে তা কোন প্রকল্পের চাল তাও জানতে হবে৷ যদি টিআর ও কাবিখার চাল হয় তাহলে তাতো বিক্রি করেই উন্নয়নমূলক কাজ হয়৷ এছাড়া অনেকে আছেন যারা খাদ্য কর্মসূচির চাল পেলেও মোটা চাল বলে খান না, বিক্রি করে দেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অনেক তালিকাই আপডেট নাই৷ আমরা আগেও প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি, আবার এইসব ঘটনা শুরুর পরও তালিকা আপডেট করতে প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি তারা আপডেট করেননি৷ এটা তারও ফল হতে পারে৷ অনেক ফলস কার্ড থাকতে পারে৷’’

চাই বেসিক ইনকাম গ্রান্ট
উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তীতুমীর বলেন,‘‘আসলে যে প্রক্রিয়ায় ত্রাণ দেয়া হয় বা গরীব মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয় তার মধ্যেই চুরির ব্যবস্থা আছে৷ এটা সব সময়ই হয়৷ এখন করোনা দুর্যোগ বলে প্রকাশ পাচ্ছে৷ যদি মানুষের হাতে ব্যাংকিং চ্যানেলে সহায়তা পৌঁছানো যেত তাহলে এই চুরি অনেকটাই রোধ করা যেত৷ এখন যে সিস্টেমে কাজ হচ্ছে এই সিস্টেমটাই করাপ্টেড৷’’

তার মতে, এমন একটা গ্রান্ট দিতে হবে যাতে একজন ন্যূনতম জীবন যাপন করতে পারে৷ একজনকে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা করে ছয় মাস ধরে ‘ব্যাসিক ইনকাম গ্রান্ট’ দিতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য