জৌলুসহীন ঈদ ভারতে
১৩ মে ২০২১গত বছর ছিল লকডাউন। তাই গোটা দেশেই ঈদ পালন করা যায়নি। জামে মসজিদের ইমাম বলেছিলেন, করোনা কালে ঘরে বসেই যেন সকলে ঈদ পালন করেন। এ বছরেও সে চিত্র বদলায়নি। গত বছরের চেয়ে করোনার প্রকোপ কয়েক গুণ বেড়েছে ভারতে। দিল্লিতে কঠোর লকডাউন চলছে। কলকাতায় আংশিক লকডাউন চলছে। এর মধ্যে ঈদের জামাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন বিভিন্ন মসজিদের ইমামরা।
কলকাতার ঈদ
কলকাতায় নাখোদা মসজিদের ইমাম শাফিক কাসেমি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে, এক জায়গায় ৫০ জনের বেশি জড়ো হতে পারবেন না। সেই নিয়ম মেনেই কোনো মসজিদে ৫০ জনের বেশি ঈদের নামাজ পড়তে পারবেন না। কাসেমির বক্তব্য, ''সকলের কাছে আবেদন করেছি, বাড়িতে বসে ঈদের নামাজ পড়ুন। সংকটকালে আগে জীবন বাঁচাতে হবে।''
কলকাতায় ঈদের সময় বাজার জমে ওঠে। নিউ মার্কেট, হাতিবাগান, জাকারিয়া স্ট্রিটে প্রায় এক মাস ধরে চলে ঈদের কেনাকাটা। কিন্তু এ বছর আংশিক লকডাউন ঘোষণা করে বাজারও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। সকালে দুই ঘণ্টা এবং বিকেলে দুই ঘণ্টার জন্য দোকান খোলা যাচ্ছে। ফলে ঈদের ব্যবসা কার্যত হয়নি।
জাকারিয়া স্ট্রিটে শেষ দুই দিন সামান্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। এক ব্যবসায়ীর কথায়, অন্যবার এই সময়ের মধ্যে দোকান খালি হয়ে যায়। এ বছর দশ ভাগ জিনিসও বিক্রি হয়নি। নিউ মার্কেটের এক দোকানদারের বক্তব্য, ''মাঝে করোনার প্রকোপ খানিকটা কমেছিল বলে ঈদের মাল কিনে ফেলেছিলাম। তারপরই লকডাউন হয়ে গেল। প্রায় কিছুই বিক্রি হয়নি। এ ভাবে চললে বাড়িতে চাল কিনতে পারব না।''
প্রতি বছর কলকাতার রেড রোডে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। কয়েক হাজার মানুষ একসঙ্গে বসে সেখানে নামাজ পড়েন। নামাজের পর শুরু হয় কোলাকুলির পর্ব। জাকারিয়া স্ট্রিট ভরে থাকে খাবারের দোকানে। এ বছর তার কোনো কিছুই হচ্ছে না।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়ার পর মমতা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বাড়িতে বসে ঈদ পালন করার জন্য ইমামদের আবেদন করার অনুরোধ করেন। ইমামরাও জানান, তারা সেটাই বলবেন।
দিল্লির ঈদ
দিল্লিতে করোনা পরিস্থিতি আরো জটিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে কড়া লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে সেখানেও ঈদের নামাজ বাড়িতে বসেই পড়তে হবে। জামে মসজিদে শাহি ইমাম আহমেদ বুখারি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আগে মানুষের জান বাঁচাতে হবে, তারপর সব কিছু। সকলে ঘরে বসে ঈদ পালন করুন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও বলেছি।'' ইমামের নির্দেশ, প্রয়োজনে বাড়ির সকলে মিলে ছাদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। কিন্তু বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভালো। দিল্লির অধিকাংশ মসজিদ ঈদের দিন সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল্লার ছোট ছোট মসজিদে অল্প সংখ্যক মানুষ যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি জাভেদ আখতার।
জাভেদের মতে, প্রতি বছর দিল্লির ঈদের বাজারে তিনশ থেকে চারশ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। এ বছর তা পাঁচ শতাংশও হয়নি। পুরনো দিল্লিতে কেউ কেউ দোকান খোলার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ তা বন্ধ করে দিয়েছে।
কোনো কোনো মহলে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে, কেন প্রতিবার ঈদের সময়েই সরকারের টনক নড়ে। কিছুদিন আগেই হরিদ্বারে কুম্ভ হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ সেখানে গেছেন। সরকার তখন নিষেধ তো করেইনি বরং কুম্ভ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। ঈদে কেন ছাড় দেওয়া হবে না? নাখোদা মসজিদের ইমাম অবশ্য বলেছেন, এ সব বিতর্ক থাকবেই। কিন্তু যেখানে মানুষের প্রাণ সংশয় রয়েছে, সেখানে কোনো উৎসব হতে দেওয়া যায় না। ফলে সকলকে ঘরে বসেই ঈদ পালন করতে হবে।