1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ট্রাম্পের মিত্র' মাস্ককে নিয়ে দেশে দেশে উদ্বেগ

৬ জানুয়ারি ২০২৫

এক সপ্তাহ পর আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ কিছু দেশ বেশ উৎকণ্ঠা নিয়েই ২০ জানুয়ারির অপেক্ষায়৷ জার্মানি, ব্রিটেন, নরওয়ে অবশ্য তার আগে থেকেই উদ্বিগ্ন ট্রাম্পের এক ঘনিষ্ঠ মিত্রকে নিয়ে৷

https://p.dw.com/p/4ornY
USA Elon Musk, CEO von Tesla und SpaceX und Präsident Donald Trump
ছবি: Alex Brandon/AP Photo/picture alliance

ট্রাম্পের কোন মিত্রের কথা বলা হচ্ছে, তা হয়ত অনেকেই বুঝতে পেরেছেন৷

হ্যাঁ, ইলন মাস্ক৷

‘‘মি. মাস্ক, আমাদের গণতন্ত্র থেকে আপনার হাত সরিয়ে রাখুন-'' ডেয়ার শ্পিগেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন রবার্ট হাবেক৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অনধিকার চর্চা করায় ইলন মাস্কের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি৷ জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর এবং অর্থনীতি মন্ত্রী হাবেকের এ মন্তব্য অবশ্য টেসলার প্রতিষ্ঠাতা মাস্ককে নিবৃত্ত করতে পারেনি৷

ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে আগাম সংসদ নির্বাচন৷ তার আগে উগ্র ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-র প্রতি মাস্কের সমর্থন প্রকাশ জার্মানির চ্যান্সেলর ও সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি) দলের প্রধান ওলাফ শলৎসকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে৷ তবে নির্বাচনের আগে ধনকুবের মাস্ক-এর জার্মান রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টিকে কার্যত বেশি আমলে নেননি শলৎস৷ জার্মানির ম্যাগাজিন স্টার্ন-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন,‘‘ এ তো নতন কিছু নয়৷ ধনী মিডিয়া উদ্যোক্তারা সামাজিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রশংসা কখনোই করে না এবং তাদের এমন মতামত প্রকাশ কখনো থামায়ও না৷''

জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর এবং অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হাবেকে
মি. মাস্ক, আমাদের গণতন্ত্র থেকে আপনার হাত সরিয়ে রাখুন : রবার্ট হাবেকছবি: Kira Hofmann/photothek.de/picture alliance

তবে শলৎস মনে করেন, এএফডির মতো দলের প্রতি মাস্ক-এর সমর্থন ব্যক্ত করার বিষয়টি খুব উদ্বেগজনক৷ স্টার্নকে তিনি বলেন,  ‘‘ মাস্ক যে এএফডির মতো দলকে সমর্থন করছেন, এটা আমার কাছে খুবই উদ্বেগজনক মনে হয়৷ আসলে এএফডি তো সেই চরম ডানপন্থি দল, যারা পুটিনের রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলে এবং ট্রান্স আটলান্টিক সম্পর্ক দুর্বল করতে চায়৷''

ব্রিটেনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এলন মাস্ক

সাউথ আফ্রিকান প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা মাস্ক এখন ব্রিটেনের রাজনীতিতেও আলোচিত-সমালোচিত নাম৷ সেখানে তিনি নজর কাড়েন গত বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে৷ ব্রিটেনেও তিনি নিজের পছন্দের দল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেছে নিয়েছেন৷ না, লেবার পার্টি বা কনজার্ভেটিভ পার্টির পক্ষে যাননি তিনি৷ বরং দল দুটির বিকল্প খুঁজে নিতেই ব্রিটেনের ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছেন৷ সেখানে তার সমর্থন ছিল রিফর্ম ইউকে পার্টির পক্ষে৷ বলা বাহুল্য, ব্রিটেনকে নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা বলা রিফর্ম ইউকে-ও ডানপন্থি ভাবাদর্শের৷ মাস্ক শুধু দলটিকে সমর্থন জানাননি, গতমাসে দলের নেতা নাইজেল ফারাজের সঙ্গে হাসিমুখে ছবিও তুলেছেন৷ ব্রিটেনের রাজনীতিতে ফারাজের বৃহস্পতি তখন তুঙ্গে৷ জুলাইয়ের নির্বাচনে ব্রিটেনের ভোটের ১৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৪১ লাখ ভোট পেয়ে পাঁচটি আসনও জিতেছে তার দল, ওই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এলন মাস্ককেও  পেয়েছেন পাশে – ব্রেক্সিট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ফারাজ খুশি তো হবেনই৷ তবে সেই খুশি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি৷

সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ মাস্ক লিখেছেন, ‘‘রিফর্ম পার্টির নতুন একজন নেতা দরকার৷ (এমন পদে থাকার জন্য) যা দরকার, ফারাজ-এর তা নেই৷''

তার এমন মন্তব্য ফারাজকে খুব বিস্মিত এবং বিব্রত করেছে৷ কারণ, সম্প্রতি ফারাজ জানিয়েছিলেন লেবার এবং কনজার্ভেটিভ পার্টির মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়তে রিফর্ম ইউকে-কে আর্থিক অনুদান দেবেন মাস্ক৷ আরো জানিয়েছিলেন এ বিষয়ে মাস্কের সঙ্গে তার আলোচনা চলছে৷

ইউকে রিফর্ম পার্টির হয়ে সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর নাইজেল ফারাজ
রিফর্ম ইউকে পার্টির নেতা হিসেবে আর নাইজেল ফারাজকে দেখতে চান না ইলন মাস্কছবি: Clodagh Kilcoyne/REUTERS

হঠাৎ কী এমন হলো যে ফারাজ-এর দিক থেকে কার্যত মুখ ফিরিয়ে নিলেন মাস্ক? এ প্রশ্নের উত্তর ফারাজেরও অজানা৷ তাই নিজের বিষয়ে মাস্ক-এর অবস্থান বদল নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি রিফর্ম ইউকে-র নেতা৷তবে মাস্ক যে সম্প্রতি অভিবাসীবিরোধী এবং মুসলিমবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট (টমি রবিনসন ছদ্মনামে পরিচিত) স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেননকে সমর্থন জানিয়েছেন, সেই বিষয়ে বলেছেন, "আমি খুব বিস্মিত! এলন ব্যক্তি হিসেবে চমৎকার৷ তবে এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করছি৷ আগের মতো আমি এখনো মনে করি, টমি রবিনসন রিফর্ম (পার্টি)-র জন্য সঠিক ব্যক্তি নয়৷''

নরওয়েতেও মাস্ক!

ডনাল্ড ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বের অনেক দেশেই চলছে ২০ জানুয়ারির অপেক্ষা৷সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো শপথ নেবেন ট্রাম্প৷দ্বিতীয় দফায় তার সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি, আঞ্চলিক সম্পর্ক, আন্ত-জোট সম্পর্ক ইত্যাদি কেমন হয় তা নিয়ে কৌতুহল, উৎকণ্ঠার শেষ নেই৷ তবে ট্রাম্পের মিত্র হিসেবে পরিচিত ইলন মাস্ক তার আগেই দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন জার্মানি, ব্রিটেনসহ বেশ কিছু দেশকে৷ এবার নরওয়ের নামও যোগ হয়েছে সেই তালিকায়৷

মাস্ক নরওয়ের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইয়োনাস গার স্তোরে৷ নরওয়ের জাতীয় সংবাদমাধ্যম এনআরকে-কে তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে ব্যাপকভাবে যুক্ত এবং অর্থনৈতিক সম্পদে এতটা সমৃদ্ধ একজন মানুষের অন্য দেশের রাজনীতিতে এভাবে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টিকে খুব উদ্বেগজনক মনে করি৷ গণতন্ত্রে এবং মিত্রদের মাঝে এমন হওয়া উচিত নয়৷'' কিন্তু মাস্ক এমন চালিয়ে গেলে কী করা যাবে? কিভাবে দেশের রাজনীতেকে তার প্রভাবমুক্ত রাখা যাবে?

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, কেবল একটা উপায়েই তা সম্ভব আর তা হলো প্রত্যোক দেশের রাজনীতিবিদদের সম্মিলিতভাবে এলন মাস্কের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো৷

এসিবি/ এসবি (এপি, রয়টার্স)