প্রাণিবৈচিত্র্য, নাকি জীবিকা?
২১ ডিসেম্বর ২০১৫সামুদ্রিক কচ্ছপদের পরিবেশ বদলে যাচ্ছে৷ তারা আগের চাইতে বেশি করে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে৷ মান্টা রে, সি টার্টল বা সামুদ্রিক কাছিম, জলের নীচে রিফ বা শৈলশিরা, ক্যারিবিয়ানে সব কিছুই বিরল হয়ে আসছে৷ সেন্ট কিট্স আইল্যান্ডের সামনে চার মিটার জলের নীচে প্রাকৃতিক জগৎ এখনও সুস্থ আছে বলেই মনে হয় – কিন্তু ধারণাটা ভুল৷
দু'কিলোমিটার দূরেই প্রবালদ্বীপগুলোর অবস্থা বিশেষ ভালো নয়৷ এখানে ক্যারিবিয়ানের ছ'টি দেশের ফিশারি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা এবং সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা ডুবসাঁতার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন, রিফগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি কী৷ ‘দ্য নেচার কনজারভেন্সি' প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠন তাদের সাহায্য করছে৷ কোথায় তারা ডুব দিচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করছে, তারা ভালো না মন্দ, কোন অবস্থা দেখবেন৷ ক্রিস্টোফার অ্যালাইনে এসেছেন গ্রেনাডা থেকে৷ তিনি বলেন, ‘‘অবিশ্বাস্য! প্রবাল, মাছ আর গলদা চিংড়ি দেখলে, জলের তলায় প্রাণিজগৎ দেখলে চমকে যেতে হয়৷ আমি যা দেখেছি, তা দারুণ৷''
মেরিন ম্যানেজড এরিয়া
কিন্তু ক্যারিবিয়ানের ছোট ছোট দ্বীপগুলোর অবস্থা বিশেষ ভালো নয়৷ সেন্ট কিট্স আইল্যান্ড আর নেভিস আইল্যান্ডের মাঝখানে ‘দ্য ন্যারোস' নামধারী সঙ্কীর্ণ প্রণালীটি চওড়ায় মাত্র চার কিলোমিটার৷ মাছ ধরার বোট, জল-ট্যাক্সি, ক্রুইজ জাহাজ, ফেরিবোট – সব কিছু যায় এই পথ ধরে৷ ফলে সংঘাত অবধারিত৷ ‘দ্য নেচার কনজারভেন্সি' প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠন বিভিন্ন ‘জোন' সৃষ্টি করবে, তথাকথিত ‘মেরিন ম্যানেজড এরিয়া'৷ একটি জোন বা এলাকা থাকবে মাছ ধরার জন্য, অন্যটি টুরিস্টদের জন্য৷
‘দ্য নেচার কনজারভেন্সি'-র শেরি কনস্টানটাইন বলেন, ‘‘জেলেরা তাদের জাল পাতে এই সংকীর্ণ প্রণালীতে, মাছেদের নার্সারি যেখানে৷ জেলেরা বিশেষ করে অনেক ছোট মাছ ধরে, কাজেই তারা বড় হতে পারে না৷ বিজ্ঞানী হিসেবে আমি শুধু বলতে পারি যে, ছোট মাছ বড় মাছের চেয়ে লক্ষ লক্ষ কম ডিম পাড়ে৷ এর অর্থ, মাছেদের যত বাড়তে দেওয়া যায়, তারা তত বেশি ডিম দেয়, যা জেলেদের পক্ষেও ভালো৷''
স্বার্থের সংঘাত
এই সব পরিবর্তন জেলেদের পক্ষে কতো সমস্যাকর, তা বোঝা গেল পরদিন৷ ভোর পাঁচটায় মাছ ধরতে বেরিয়েও তারা বিশেষ কিছুই ধরতে পারেনি, যা প্রায়ই ঘটে থাকে৷ সাগরে আর বড় মাছের ঝাঁক প্রায় নেই বললেই চলে, কাজেই জেলেরা ছোট মাছই ধরে, যা আগে কেউ খেতো না৷ কিন্তু ছোট মাছ ধরে আজ রুজি চালানো প্রায় অসম্ভব৷ অনেকেই মাছ ধরার পেশা ছেড়ে দিয়েছে৷
স্বার্থের সংঘাত বিপুল৷ দ্বীপটা বেঁচেই আছে পর্যটকদের কল্যাণে৷ কাজেই হোটেল মালিকরা মৎস্যশিকারীদের উপর খাপ্পা – কেননা জেলেরা হোটেলের নিজস্ব বেলাভূমির সামনেই জাল ফেলে৷ ভবিষ্যতে তা নিষিদ্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে যেটুকু প্রবাল এখনও এখানে আছে, সেটুকু অন্তত বাঁচানো যায়৷
হোটেলের মালিক অ্যালিস্টেয়ার ইয়ারউড বলেন, ‘‘আমি চাই যে, মাছ ধরার পেশা শুধু বেঁচে থাকুক নয়, বরং বাড়তে থাকুক৷ আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে, ‘দ্য ন্যারোস'-এর মতো এলাকা, যেখানে মাছেরা ডিম পাড়ে, সেগুলো ঠিকমতো ম্যানেজ করতে পারলে শেষমেষ মাছ ধরা আর সেই সঙ্গে আমাদের হোটেল শিল্পও উপকৃত হবে৷''
আপোশ
ওয়ার্কশপে আবার সকলে একসঙ্গে: সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী৷ সকলে মিলে পরামর্শ করছেন: জেলেদের স্বার্থ আর হোটেল মালিকদের স্বার্থের মধ্যে আপোশটা কী হতে পারে৷ গ্রেনাডার মতো কয়েকটি দ্বীপরাজ্য সাগরে সংরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি করেছে, যদিও তা করতে দু'বছর সময় লেগে গেছে৷ গ্রেনাডার মৎস্য বিভাগের ক্রিস্টোফার অ্যালাইনে বলেন, ‘‘যে জেলেরা এককালে বলত, তোমরা আমাদের রুটি কেড়ে নিচ্ছ, তারাই এখন বলছে, আমরা আরো বেশি সংরক্ষিত এলাকা চাই৷ ওরা ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো দেখছে৷''
কিন্তু সময় ফুরিয়ে আসছে৷ এখন কিছু না ঘটলে, প্রবালগুলো মরতে থাকবে, সেই সঙ্গে মাছও কমতে থাকবে৷ সেন্ট কিট্স আর নেভিসের মাঝামাঝি যে সংরক্ষিত এলাকা আছে, ভবিষ্যতে সেখানে আবার মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের কাচ্চাবাচ্চা শান্তিতে বাড়তে পারবে৷ বিশেষ করে সামুদ্রিক কাছিমরা আর জেলেদের জালে জড়িয়ে প্রাণ দেবে না৷'