প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে
২৫ আগস্ট ২০১৫ধান আর বজরার চাষ করা হতো এখানে৷ কিন্তু আজ আর কিছুই গজায় না৷ সাগর থেকে লবণাক্ত পানি এসে ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করেছে৷ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজার্ভেশন অফ নেচার বা আইইউসিএন-এর আল হাজি বালে সেই বলেন যে, এলাকার দশ শতাংশ চাষের জমি এ ভাবে নষ্ট হয়েছে: ‘‘গাছপালা মরে গেছে, মাটি লবণে ভরা৷ কোনো কোনো অংশ অম্লে পরিণত হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায়, লবণাক্তকরণ কতদূর ঢুকে পড়েছে৷''
গ্রামের নাম হলো পেজ৷ বাসিন্দারা সাধারণত এই চত্বরটিতে মিলিত হন৷ গাঁয়ের সাড়ে চারশো মানুষের সকলেই একটু প্রাচীনপন্থি৷ তাঁরা এখানে থাকতে পারবেন কিনা, তা নির্ভর করবে লবণাক্তকরণ বন্ধ করা সম্ভব হবে কিনা, তার উপর৷ আল হাজি বালে সেই এ কাজে গ্রামবাসীদের সাহায্য করতে চান৷
গ্রামবাসীরা খেতের ফসল থেকেই জীবনধারণ করেন৷ বর্তমানে চাষিরা ফসল বোনার জন্য খেত তৈরি করছেন৷ কিছু বজরা গতবারের ফসল থেকে বেঁচে গেছে৷ মহিলারা পরে এ দিয়ে কুসকুস তৈরি করবেন৷ আপাতত তাঁদের অন্য জায়গা থেকে শস্য কিনতে হচ্ছে৷ পেজ গ্রামের বাসিন্দা জোজো দিউফ বলেন, ‘‘লবণাক্তকরণের দরুন আমরা আর পর্যাপ্ত ধান পাচ্ছি না৷ আগে যা ফসল আনতাম, তাতে এক বছরের কাজ চলে যেত৷ কিন্তু লবণের কারণে মাটি আর তত উর্বর নয়৷ তবুও আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷''
‘দিগেৎ' বাঁধ প্রকল্প
আবার আমরা সেই-র সাথে পেজ গ্রামে গেলাম৷ তিনি এখানে এবং আরো পাঁচটি গ্রামে ‘দিগেৎ' নামের ছোট ছোট বাঁধ তৈরির প্রকল্প চালাচ্ছেন৷ এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, লবণ যাতে আরো জমিতে ঢুকে না যায়, তা রোধ করা এবং জমির ক্ষয় রোধ করা৷ ‘দিগেৎ'-গুলি বৃষ্টির জল ধরে রেখে ভূগর্ভস্থ পানিতে তা যোগ করে৷ আল হাজি বালে সেই বলেন, ‘‘জমি বাঁচানোর এই সব পন্থার বাস্তবিক প্রভাব আমরা এখনো খতিয়ে দেখিনি, কিন্তু আমাদের এগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে, কেননা এগুলোতে বিশেষ খরচ নেই৷ আবার এগুলো প্রথাগত প্রযুক্তিও বটে৷''
গ্রামবাসীরা দিগেৎ নির্মাণ এবং প্রকল্পের অপর অংশ – পুনর্বনানীকরণ, উভয়ই সমর্থন করেন৷ নতুন চারা রোপণ করে জমির ক্ষয় স্থগিত করা এবং হাওয়ায় মাটির ক্ষয় রোখা, গাছপালা যা করতে সক্ষম – এই হলো দুই লক্ষ্য৷ আল হাজি বালে সেই জানালেন, ‘‘সরকারের তরফ থেকে একটি ন্যাশনাল পার্ক স্থাপন করা হয়েছে৷ পৌর পর্যায়েও একাধিক প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা আছে৷ কিন্তু আমরা চাই যে, চাষবাসের জমিতেও প্রকৃতি আবার তার নিজের আকৃতি ফিরে পাক৷''
স্বার্থের সংঘাত
কিন্তু সেটা সবসময় সহজ নয়৷ একটি পরিবেশ প্রণালীতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে অনেক আপোশের প্রয়োজন পড়ে৷ পানি ভাগাভাগি করে নিতে হয়, গরুবাছুর সর্বত্র চরতে পারবে না৷ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করার জন্য অনেক সময় নিজের ভোগ এবং প্রয়োজন কমাতে হয়৷ যা থেকে স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়৷
গ্রামবাসীদের বৈঠকে সেই সব সমস্যা আলোচিত হয়৷ এক মহিলা হয়ত অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর গরুর পাল আর যথেচ্ছ চরতে পারছে না; কাজেই তারা কম খেতে পাচ্ছে এবং কম দুধ দিচ্ছে৷ আরেকজন বলেছেন, জনতাকে অপরের স্বার্থ বুঝতে হবে এবং সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷ অথচ নিজেদের মধ্যে নিয়মকানুন ঠিক করা সহজ কাজ নয়; এছাড়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সব কিছু আইনানুগ হতে হবে৷
আল হাজি বালে সেই বলেন, ‘‘কখনো কখনো স্থানীয় রীতিনীতি আর হালের আইনকানুনের মধ্যে বিরোধ বাধে৷ বৈঠকে আমরা স্থানীয় রীতিনীতি এবং সরকারি আইনের মধ্যে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছি৷ আপোশে এমন একটি দলিল সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি, যার মাধ্যমে আমরা শান্তি ও সম্প্রীতি সহ প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারব৷''
অতীতে এই অজ্ঞাত স্থানে নাকি রাজা-রাজড়াদের গোর দেওয়া হতো৷ আজ এখানে পেজ গ্রামের অধিবাসীরা আসেন বৃষ্টির প্রার্থনা করতে, ফসলের জন্য বৃষ্টি৷ কেননা, তারা যদি তাঁদের জীবিকা হারিয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন, তবে তাঁরা তাঁদের সাংস্কৃতিক সত্তাও হারাবেন৷