ডেল্টা সামলাতে নাস্তানাবুদ ইউরোপ
১৩ জুলাই ২০২১করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার কিছুটা কমতেই ইউরোপের একাধিক দেশ তড়িঘড়ি করে বিধিনিষেধ শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছিল৷ বিশেষ করে আরো ছোঁয়াচে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের হুমকি সত্ত্বেও সেই বিপদ দূরে রাখতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি৷ ফলে সংক্রমণের হার আবার দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ পরিস্থিতি সামলাতে আবার কিছু বিধিনিষেধ চালু করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার ও প্রশাসন৷ গ্রীষ্মের ছুটির মরসুমে এমন বিপদ দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে৷ পর্তুগাল, স্পেন ও সাইপ্রাসের মতো দেশে পর্যটনের সুযোগ আবার খুলে যাবার পর সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে গেছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে বিলম্ব সত্ত্বেও গত কয়েক মাসে বিশাল সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ টিকার সরবরাহ নিয়েও আর তেমন কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না৷ কিন্তু এখনো ইউরোপের জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নানা কারণে করোনা টিকা পায় নি৷ টিকা কর্মসূচিতে গতি আনতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি সব স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা করেছেন৷ সিনেমা হল বা ট্রেনের মতো বদ্ধ জায়গায় প্রবেশ করতে হলে সে দেশে করোনা টিকা অথবা করোনা পরীক্ষার ফলাফল দেখাতে হবে৷ জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন ভাষণে মাক্রোঁ বলেন, দেশের প্রায় সব মানুষ করোনাটিকা না নিলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনা কার্যত অসম্ভব৷ উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে শুধু ইটালি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করেছিল৷ ফ্রান্স ও গ্রিসও এখন সেই পথে এগোচ্ছে৷
নেদারল্যান্ডস ও স্পেনের সরকার মাস্ক-সহ অন্যান্য বিধিনিয়ম তুলে নেবার পর আবার কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে৷ নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে পরিস্থিতির ভুল মূল্যায়নের কারণে জনসাধারণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন৷ স্পেনের কয়েকটি প্রদেশ এমনকি রাতে কারফিউ ও অন্যান্য বিধিনিয়ম আবার চালু করছে৷
ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে ব্রিটেন সংক্রমণের উচ্চ হার সত্ত্বেও আগামী সপ্তাহ থেকে করোনা সংক্রান্ত সব বিধিনিয়ম তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য দেশবাসীর উদ্দেশ্যে সাবধনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন৷ মহামারির ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি আইনি পদক্ষেপের বদলে পরামর্শের ভিত্তিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান৷ দেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক টিকার সব ডোজ পেয়ে যাওয়ায় জনসন আর বাকিদের জন্য বিধিনিয়ম চালু রাখার পক্ষে নন৷
জার্মানিতে কিছু বিধিনিয়ম শিথিল করা হলেও বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে৷ ফলে সংক্রমণের হার সামান্য মাত্রায় আবার বেড়ে চললেও ইউরোপের বাকি অনেক দেশের তুলনায় পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক৷ জার্মান কর্তৃপক্ষ এবার থেকে শুধু সংক্রমণের হারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উপর মহামারির চাপ বিশ্লেষণ করতে অন্যান্য সূচক বিবেচনা করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেন, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ের মানুষের মধ্যে প্রায় সবাই করোনা টিকা পেয়ে যাবার ফলে সংক্রমণের হার বাড়লেও গুরুতর অসুস্থ মানুষের অনুপাত অনেক কম৷ মঙ্গলবার থেকে জার্মানির হাসপাতালগুলিকে এ সংক্রান্ত আরও তথ্য পাঠাতে হবে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)