1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতি বন্ধে দুদকের অভিযান কতটা কার্যকর?

১০ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সেগুলো আদতে খুব একটা কাজে লাগছে না৷ দেশে দুর্নীতির চিত্র এবং প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে ডয়চে ভেলে কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে৷ 

https://p.dw.com/p/3W0DK
ছবি: bdnews24.com

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতায় দুর্নীতি হয়৷ একপক্ষ রাজনীতিবিদ, আরেক পক্ষ সরকারি কর্মচারী আর তৃতীয় পক্ষ ব্যবসায়ী বা ঠিকাদার৷ এখন কোন একজনকে গ্রেপ্তার করলেই দুর্নীতি কমবে না৷ আগে বন্ধ করতে হবে রাজনীতিকদের দুর্নীতি৷’’

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার কয়েকটি ব্যাগে এক কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে৷ এই টাকার বৈধ কোন উৎস দেখাতে না পারায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তার বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা করা হয়েছে৷ অজ্ঞাত ব্যক্তির টেলিফোন পেয়েই এই অভিযান চালায় দুদক৷

হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘‘এই কর্মকর্তার মতো আরো অনেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন যারা কমিশন ছাড়া কাজ ছাড়েন না৷ এখন একজন তাজুল ইসলামকে ধরলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না৷ সব পক্ষের বিরুদ্ধেই একযোগে কাজ করতে হবে৷ এমনকি রাজনৈতিক দুর্নীতিও বন্ধ করতে হবে৷ মানুষ ভোট দিতে না পারাও এক ধরনের দুর্নীতি৷ রাজনীতিবিদদের কারণে অন্যরা সুযোগ নিচ্ছেন৷’’

এম. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ

একই দিনে খুলনায় দুদক ফাঁদ পেতে একজন খাদ্য কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে৷ ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল বাজার এলাকার জামান অটো রাইসমিলের মালিক মো. কামরুজ্জামানের ১১ লাখ টাকার একটি বিল প্রদানের ক্ষেত্রে খাদ্য কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন গড়িমসি ও তালবাহানা করছিলেন৷ এক পর্যায়ে বিলটি ছেড়ে দিতে ইলিয়াস হোসেন তার কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন৷ বিষয়টি রাইসমিল মালিক দুদককে জানান৷ সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার কামরুজ্জামান খাদ্য কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেনকে একটি খামে করে ১ লাখ টাকা দেন৷ এ সময় খাদ্যগুদামের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দুদক কর্মকর্তারা ইলিয়াস হোসেনের অফিসে হানা দিয়ে তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে ১ লাখ টাকাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে৷

দুদকের এই ধরনের কার্যক্রমে দুর্নীতির ক্ষেত্রে কি ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে?

জবাবে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একদিনে তো দুর্নীতির এই অবস্থা তৈরি হয়নি৷ এটা একদিনে যাবেও না৷ তবে দুদক যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তাতে কিছু ইতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে৷ তবে শুধু দুদকের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। সামগ্রিকভাবে সুশাসন ও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি জরুরি৷’’

গোলাম রহমান

দুদকের সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পুও ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন, ‘‘দুদকের সাম্প্রতিক কিছু কার্যক্রম মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে৷ বিশেষ করে সরকার প্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এই কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উৎসাহ জোগাবে৷ তবে দুদকের একার পক্ষে বা একশটা দুদক দিয়েও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ হবে না, যদি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা না যায়৷’’

গত বছরের জানুয়ারিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে ঢাকায় দুর্নীতির ধারণা সূচক সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ সেখানে দেখা যায় ১৩তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ৷ টিআইর দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ তালিকার এক নম্বরে ছিল৷ অর্থাৎ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ছিল৷ ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম, ২০০৮ সালে দশম, ২০০৯ সালে ১৩তম, ২০১০ সালে দ্বাদশ, ২০১১ সালে ১৩তম , ২০১২ সালে ১৩তম , ২০১৩ সালে ১৬তম, ২০১৪ সালে ১৪তম, ২০১৫ সালে ১৩তম, ২০১৬ সালে ১৫তম, ২০১৭ সালে ১৭তম এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম৷ ২০১৯ সালের রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি৷ আর গত জুনে দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে দেশে দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে৷

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে দুর্নীতি কমেছে এটা বলা মুশকিল৷ বরং দুর্নীতির গভীরতা উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে৷ সরকার প্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষণা ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে৷ তবে দিনাজপুর বা খুলনার ঘটনাগুলো তো একদিনে তৈরি হয়নি৷ সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া গেলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব৷’’

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য