বন্ধ হচ্ছে না সীমান্ত হত্যা
১২ জুলাই ২০১৯সীমান্ত হত্যা বন্ধে ২০১১ সালে বিজিবি ও ভারতের বিএসএফের মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছিল৷ চুক্তিতে বলা হয়, সীমান্ত পারাপারে মানুষ হত্যায় অস্ত্র ব্যবহার করবে না এই দুটি দেশ৷ চুক্তি করেও বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা৷
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, গত ১০ বছরে সীমান্তে ২৯৪ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফ৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে ৬৬ জন, ২০১০ সালে ৫৫, ২০১১ সালে ২৪, ২০১২ সালে ২৪, ২০১৩ সালে ১৮, ২০১৪ সালে ২৪, ২০১৫ সালে ৩৮, ২০১৬ সালে ২৫, ২০১৭ সালে ১৭ ও ২০১৮ সালে ৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷
ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''যেসব সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল আনা-নেয়া হচ্ছে সেখানে তো সীমান্তরক্ষীর বাহিনীর গুলিতে কেউ মারা যাচ্ছে না৷ আবার মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনা-নেয়ার সময়ও গুলিতে কেউ মরছে না৷ ''
‘‘যেসব সীমান্ত দিয়ে গরু আনা হচ্ছে সেখানেই মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ এখন তো গরু চোরাচালান অনেকটাই বন্ধ হয়েছে৷ তারপরও কেন সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামছে না?''-প্রশ্ন রাখেন আইনজীবী জ্যোতির্ময়৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা তো এর আগে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানদের বলতে শুনেছি, গুলিতে যে মারা গেছে সে গরু চোরাকারবারি৷ অথচ আমরা আমাদের গ্রামে ঢুকে তাদের মারতে দেখেছি৷ এখন ওরা বড় দেশ৷ আমরা অনেক ছোট৷ কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় পলিসি তো শক্ত হতে হবে৷ নতজানু পলিসির কারণে আমরা এটা বন্ধ করতে পারছি না৷ আমরা তো প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই৷ ফলে রাষ্ট্র আইসিসিতেও যাবে না৷'
বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকার বলেছেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে৷ তার আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর৷ ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পিলখানায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন উদ্বোধন করে তিন বলেছিলেন, ‘‘আমি আশা করবো এই বৈঠকের পর সীমান্ত হত্যা শূন্যে নেমে আসবে৷ আমরা সীমান্তে আর কারো মৃত্যু দেখতে চাই না৷''
তারও আগে, ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের সঙ্গে বৈঠক করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন৷ বৈঠক শেষে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড অনেক কমেছে বলে দাবি করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ আর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন তার এই বক্তব্য শুনে সীমান্তে হত্যা ‘শূন্যে' নামিয়ে আনতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান৷
এ প্রসঙ্গে, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, তাহলে গ্যাপটা কোথায়? সেটা আসলে আমরা বুঝে উঠতে পারছি না৷ একটা হতে পারে আমরা ছোট দেশ, আর ওরা বড় দেশ৷ এ কারণে ওরা আমাদের কথা গুরুত্বই দিচ্ছে না৷ এই কারণে আমি বলি, আলোচনাটা আরো বাড়াতে হবে৷ শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলতে হবে৷ তাহলে যদি সমস্যাটার সমাধান করা যায়৷ অন্য কোন পথ তো আমি দেখি না৷''