প্রশ্নাতীত হোক বিশ্বকাপের আম্পায়ারিং
২৭ মে ২০১৯গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচটি কে ভুলতে পারবে? ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে রুবেল হোসেনের ফুলটস বলটি রোহিত শর্মার কোমরের নীচে থাকলেও, লেগ আম্পায়ার আলিম দারের পরামর্শে ‘নো বল' ডাকেন ইয়ান গোল্ড৷ শুধু ঐ সিদ্ধান্তের কারণেই হোক বা না হোক, শেষ চারের টিকিট আর পাওয়া হয় না টাইগারদের৷
ওই ‘নো বল'টি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য দগদগে ঘা৷ তবে বিশ্বকাপ বা ক্রিকেটের বড় আসরে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের সিদ্ধান্ত নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ একটা সময়ে তো এমনও ছিল যে, এক দেশ আরেক দেশে গিয়ে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে নাক-চোখের পানি এক হয়ে যেতো৷ কারণ, স্বাগতিক দেশের আম্পায়াররা থাকতেন দায়িত্বে৷ তাইতো পরে নিরপেক্ষ দেশের আম্পায়ার দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি৷
শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির অগ্রসরতা আম্পায়ারিংকে আরো নিখুঁত ও খেলোয়াড়-বান্ধব করেছে৷ দলগুলো আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারছে৷ আম্পায়াররা থার্ড আম্পায়ারের সহযোগিতা নিতে পারছেন৷ এতে আগের চেয়ে খেলার সার্বিক মান বেড়েছে, তা মানতেই হবে৷ কিন্তু ক্রিকেট কি বিতর্কের উর্ধ্বে যেতে পেরেছে? অনেকটা পেরেছে৷ কিন্তু পুরোপুরি পারেনি৷ রুবেল-রোহিত শর্মার ঘটনাটি এর বড় উদাহরণ৷
২০১৮ সালের শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি কিংবা আরব আমিরাতে এশিয়া কাপেও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বলি হয়েছিল বাংলাদেশ৷ নিদাহাসের ফাইনালের আগের ম্যাচে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের৷ প্রথম দুই বলে টানা দু'টি বাউন্সার দেন শ্রীলঙ্কান পেসার উদানা৷ তারপরও ‘নো বল' দেননি আম্পায়ার৷ শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এক বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷
এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা লিটন দাশের স্টাম্পিং নিয়েও রয়েছে বিতর্ক৷ থার্ড আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়ার রড টাকারের কাছে যাবার পরও তিনি ব্যাটসম্যানকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট' দেননি, যা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে৷
শুধু বাংলাদেশই নয়, বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই নয়, বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়েছে আইপিএলের মতো বিখ্যাত টুর্নামেন্টও৷
এবারের আইপিএলে লাসিথ মালিঙ্গার পরিষ্কার নো বলটি এড়িয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন আইসিসি'র আম্পায়ারদের এলিট সদস্য ভারতের সুন্দারাম রবি৷ বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলি সরব হয়ে ওঠেন৷ এলিট প্যানেলের ১২ জন সদস্যের মধ্যে পারফরম্যান্সের দিক থেকে রবি সবার নীচেই ছিলেন৷ তাই বিশ্বকাপের পর এলিট প্যানেল থেকে ছিটকে পড়তে পারেন তিনি৷ বিশ্বকাপের আম্পায়ারিংয়ের ২২ জনের প্যানেলে তিনিই একমাত্র ভারতের প্রতিনিধি৷
আধুনিক যুগে এসে প্রযু্ক্তির কল্যাণে এগুলো অনেক কমে গেলেও, বন্ধ হয়নি৷ হট স্পট, হক আই, এলইডি লাইটিং, স্পাইডার ক্যাম, বল স্পিড মেজারমেন্ট—প্রযুক্তির এসব সুবিধা নিয়েও এখনো অনেকে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন৷
কখনো কখনো প্রশ্ন ওঠে আম্পায়ারদের ‘নৈতিকতা' নিয়েও৷ বিশেষ করে বড় বড় দলগুলোর পক্ষে আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন, এমন একটি ধারণা চালু আছে বহুদিন ধরে৷ এই ধারণার প্রাবল্য কমলেও অস্তিত্ব আছে এখনো৷ সমস্যা সেখানেই৷
নৈতিকতার প্রশ্নে আম্পায়াররা বিদ্ধ হবেন না, উতরে যাবেন, সেই প্রত্যাশা থাকলো৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো আসরে, প্রচণ্ড চাপ থাকে৷ সেই চাপ নিয়েই আম্পায়াররা আম্পায়ারিং করেন, যা অত্যন্ত কঠিন৷ সেই কঠিন কাজটি করতে গিয়ে ভুল হতেই পারে৷ কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, সেই ভুলটা যেন অনিচ্ছাকৃত হয়৷ যে কোনো দলই, হোক সে ‘ছোট' কিংবা ‘বড়'—বাড়তি সুবিধা বা অসুবিধা কেউ পাবেন না, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷