‘মুসলিমদের নির্মূল করতে চেয়েছিলেন ম্লাদিচ’
২৩ নভেম্বর ২০১৭১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসা শহরে রাটকো ম্লাদিচের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে ঘটা সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড বলে পরিচিত এটি৷
বুধবার ম্লাদিচের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ফর্মার ইয়োগোশ্লাভিয়া' বা আইসিটিওয়াই-এর বিচারকরা৷ এই সময় ম্লাদিচকে স্রেব্রেনিৎসা হত্যাকাণ্ডসহ মোট দশটি অপরাধে দণ্ডিত করা হয়৷ এর মধ্যে গণহত্যা ছাড়াও আছে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ৷
আইসিটিওয়াই-এর বিচারক আলফোনস ওরি বলেন, ‘‘স্রেব্রেনিৎসায় পুরুষ ও তরুণদের হত্যা এবং নারী, বালক ও কয়েকজন বয়স্ক মানুষকে শহর ত্যাগ করতে বাধ্য করে ম্লাদিচ স্রেব্রেনিৎসা থেকে বসনিয়ান মুসলমানদের নির্মূল করতে চেয়েছিলেন৷’’
আদালতে উপস্থিত হয়ে রায় ঘোষণার আগে ম্লাদিচ ‘বিচারকরা মিথ্যা বলছেন’ বলে চিৎকার করতে থাকলে তাঁকে আদালত কক্ষ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়৷
রায় ঘোষণার সময় আদালতের বাইরে নিহতদের আত্মীয়রা ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ স্বামী, বাবা ও সন্তান হারানো নেদজিবা সালিহোভিচ বলেন, ‘‘ম্লাদিচ দ্য হেগে মারা যাবে৷ ন্যায়বিচার হওয়ায় আমি খুব খুশি৷’’
এদিকে, মাদার্স অফ স্রেব্রেনিৎসা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনিরা সুবাসিচ জানান, ম্লাদিচের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ে তিনি ‘আংশিক খুশি’, কারণ, কয়েকটি গ্রামে গণহত্যা চালানোয় ম্লাদিচকে অভিযুক্ত করা হয়নি৷
তবে ম্লাদিচের রায়ে রাদোভান কারাজিচের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন সুবাসিচ৷ কারণ, ম্লাদিচের মতো একই রকম অভিযোগে অভিযুক্ত কারাজিচকে গত বছর ৪০ বছরের সাজা দেয়া হয়৷
প্রতিক্রিয়া
‘বসনিয়ার কসাই’ ম্লাদিচের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের পর সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ তাঁর দেশের নাগরিকদের অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে বলেছেন৷ একই রকম বক্তব্য শোনা গেছে বসনীয় মুসলমানদের নেতা বাকির ইজেৎবগোভিচের কণ্ঠে৷ সার্বদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘সত্যকে স্বীকার করাই একমাত্র রাস্তা, একমাত্র উপায়৷ তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ অতীতের চেয়ে ভালো হবে৷’’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে’ বলকান অঞ্চলের দেশগুলির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ জাতিসংঘ রায়কে ‘ন্যায়বিচারের পক্ষে অবিস্মরণীয় বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷ যুক্তরাষ্ট্র বলকান অঞ্চলের সবাইকে একত্র হয়ে ঐ অঞ্চলের উন্নতির জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে৷ জার্মানিও রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)