1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যশোর রোডের গাছ কাটা শুরু এ মাসেই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ জানুয়ারি ২০১৮

ঐতিহাসিক যশোর রোডের বাংলাদেশ অংশের গাছ কাটা এ মাসেই শুরু হবে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন৷ আপাতত রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য এই উদ্যোগ৷ ফোর লেন হবে পরে৷

https://p.dw.com/p/2qs6W
Bangladesch Bäume der Jessore Road
ছবি: Tawhid Zaman

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী যশোর রোডের দৈর্ঘ্য ১০৮ কি.মি.৷ যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত বাংলাদেশ অংশে এর দৈর্ঘ্য ৩৮ কি.মি.৷ ভারতের পেট্রাপোল থেকে কলকাতার দমদম পর্যন্ত ৭০ কি.মি.৷

যশোরের সিনিয়র সাংবাদিক ফখরে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘১৮৪০ সালে এই যশোর রোডের নির্মান কাজ শুরু করেন যশোরের তখনকার জমিদার কালি পোদ্দার৷ ১৮৪৪ সালে সড়ক নির্মাণ শেষ হয়৷ এরপর তিনি রাস্তার দু'ধারে সারি সারি রেইনট্রি লাগান ছায়ার জন্য৷ বাংলাদেশ অংশে তাঁর লাগানো প্রায় ১৮০ বছর বয়সি গাছ আছে আড়াইশ'র মতো৷ পরে আরো গাছ লাগানো হয়েছে৷ সব মিলিয়ে ৩৮ কি. মি. সড়কের দু' ধারে দুই হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে৷’’ তিনি আরো জানান, ‘‘কথিত আছে জমিদার কালি পোদ্দার তাঁর মা-কে চিকিৎসার জন্য সড়ক পথে কলকাতা নিতে এই রাস্তা নির্মাণ করেন৷ আর গাছ লাগান ছায়ার জন্য৷’’

‘১৮০ বছর বয়সী গাছ আছে আড়াইশ’র মতো’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই যশোর রোড জড়িয়ে আছে৷ এই যশোর রোড ধরেই শত শত শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন৷ বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' এই সড়কটিকে বিশ্ববাসীর কাছেও পরিচিত করেছে৷ বাংলাদেশে গণহত্যা আর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে যাওয়া মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'৷

এই যশোর রোড এখন প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে৷ ভবিষ্যতে এই সড়ক হবে ফোর লেন থেকে সিক্স লেন৷ এখন সড়কটি দুই লেনের৷ গত ৬ জানুয়ারি যশোরে এক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় তিন সংসদ সদস্য এবং প্রকৌশলীরা সড়ক উন্নয়নে দু' পাশের সব গাছ কেটে ফেলার পক্ষেই মত প্রকাশ করেন৷ তাঁরা মনে করেন, রাস্তা প্রশস্ত করতে হলে গাছ কাটতেই হবে৷

‘গাছগুলোকে সড়কের মাঝে ডিভাইডার হিসেবে রেখে লেন বাড়ানো সম্ভব’

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়াতে হোসেন সোমবার এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলেন, ‘‘যশোর রোডটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ৷ দিন দিন এর গুরুত্ব বাড়ছে৷ ভবিষ্যতে গুরুত্ব আরো বাড়বে৷ তাই এই সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে৷ চার বছর পর এটাকে ফোর লেনের সড়কে পরিণত করার কাজ শুরু হবে৷ ভবিষ্যতে সিক্স লেনও হতে পারে৷ কোনোভাবেই গাছ রেখে সিক্স লেন করা সম্ভব নয়৷ আর মহাসড়কের পাশে পৃথিবীর কোথাও বড় গাছ নাই৷ যেহেতু আমাদের ভবিষ্যতে গাছ কাটতেই হবে, তাই এখন সড়ক সম্প্রসারণ পর্যায়েই আমরা দু'পাশের গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এই মাসেই আমাদের একটি আন্তঃমন্ত্রনালয় বৈঠক আছে৷ সেখানে গাছের মালিকানা নির্ধারণ করেই গাছ কাটা শুরু হবে৷ জেলা প্রশাসন গাছগুলোর মালিকানা দাবি করেছে৷ আমাদের কাছে মূখ্য বিষয় হলো গাছ কাটা, কারণ, গাছ থাকলে দুর্ঘটনা বাড়ে৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে দাবি করেন, ‘‘ভারতের অংশে এরইমধ্যে ফোর লেন সড়ক করা হয়েছে৷ তারা কিছু গাছ রেখে বাকি গাছ কেটে ফেলেছে৷’’

‘আমরা রাস্তা নির্মানের পর একটা গাছের পরিবর্তে তিনটি গাছ লাগাব’

তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘যশোর রোডের দু'পাশে যে শতবর্ষী গাছ আছে তার কিছু মরে গেছে৷ অনেকগুলোই বয়সোত্তীর্ণ৷ আবার নানা সাইনবোর্ড লাগিয়ে গাছ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে৷’’

কিন্তু যাশোরের সাধারণ মানুষ এবং পরিবেশপ্রেমীরা এই যাশোর রোডের শতবর্ষী গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন৷ তাঁরা গাছ না কেটে বিকল্প পথে সড়ক প্রশস্ত বা ফোর লেন করার কথা বলছেন৷ তাঁরা ১৭ জানুয়ারি যশোরে মানবন্ধনের ডাক দিয়েছেন৷ যাশোর ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি এবং পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ইকবাল কবির জাহিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যশোর রোড এবং এই গাছের একটা ইতিহাস আছে, আছে ঐতিহ্য৷ আমাদের যে-কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা ঐতিহ্য এবং পরিবেশকে রক্ষা করেই করতে হবে৷ এটা ফোর লেন বা সিক্স লেন যা-ই করা হোক না কেন, তা গাছগুলোকে রেখেই করা সম্ভব৷ দু' পাশের গাছগুলোকে সড়কের মাঝে ডিভাইডার হিসেবে রেখেই রাস্তার লেন বাড়ানো সম্ভব৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ভারতের অংশে ফোর লেনের কাজ কিন্তু গাছগুলো না কেটে মাঝখানে রেখেই করা হচ্ছে৷ ক্যানডায়ও এরকম গাছ না কেটেই সড়ক সম্প্রসারণের উদাহরণ আছে৷’’

‘কোনোভাবেই গাছ রেখে সিক্স লেন করা সম্ভব নয়’

তিনি জানান, ‘‘সাধারণ মানুষের দাবির মুখে গত ১৬ জুলাই সড়ক পরিবহণ মন্ত্রনালয় যশোর রোডের দু' পাশের গাছ না কেটেই সড়ক সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়৷ কিন্তু হঠাৎ করে ৬ জানুয়ারি যশোরে এক মতবিনিময় সভায় গাছ কাটার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়৷’’

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়াতে হোসেন বলেন, ‘‘আমরা একবার সড়ক সম্প্রসারণের এই পর্যায়ে গাছ না কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ পরে দেখলাম, ফোর লেন, সিক্স লেন হলে গাছ তো কাটতেই হবে, তাই শেষ পর্যন্ত এখনই কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’

যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির গাছ কাটার সরকারি এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পদ্মা সেতুর কারণে যশোর রোডের গুরুত্ব বেড়ে গেছে৷ তাই উন্নয়নের স্বার্থে রাস্তা প্রশস্ত করতে দু' পাশের গাছ কাটতেই হবে৷ তবে আমরা রাস্তা নির্মাণের পর একটা গাছের পরিবর্তে তিনটি গাছ লাগাবো৷ উন্নয়নও হবে, পরিবেশ রক্ষাও হবে৷’’ গাছগুলো রেখে বিকল্পভাবে সড়ক সম্প্রসারণ সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সেটা এক্সপার্টরা বলতে পারবেন৷’’

তবে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়াতে হোসেন বলেছেন, ‘‘সম্প্রসারণের পর রাস্তার দু' ধারে বড় কোনো গাছ নয়, বিউটিফিকেশনের (সৌন্দর্য বৃদ্ধির) জন্য ছোট ছোট গাছ লাগানো হবে৷’’ 

‘যশোর রোডের বৃক্ষ আচ্ছাদন সুন্দরবনের চার ভাগের এক ভাগ’

যশোর রোডের গাছগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো দু' পাশের উঁচু গাছের শাখা ও পাতা সড়কের উপরে সবুজ দিয়ে ঢেকে রেখেছে৷ যতদূর চোখ যায় সবুজ ছায়ার সমারোহ৷ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ও টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যশোর রোডের বাংলাদেশ ও ভারত অংশের গাছগুলো আচ্ছাদন দেয়৷ এটাকে আমরা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘লিফ এরিয়া ইনডেক্স’ বলি৷ যশোর রোডের এই যে বৃক্ষ আচ্ছাদন, তা সুন্দরবনের চার ভাগের এক ভাগ৷ গাছগুলো লম্বা সারিতে থাকায় এটা হয়তো আমাদের অনেকের ধারণাতেই নাই৷ তাই সুন্দর বন রক্ষায় আমরা এত কথা বলি, কিন্তু যশোর রোডের এই গাছ নিয়ে তেমন কেউ কথা বলছে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘যশোর রোডের রেইনট্রি পরিবেশ বান্ধব৷ ফুল হয়, পাখি বাসা বাধে৷ পরিবেশ শীতল করে৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে৷ ফোর লেন বা সিক্স লেন যা-ই হোক না কেন, গাছগুলো রেখেই তা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি৷ তার উদাহরণও আছে৷ এই গাছগুলো কেটে রাস্তা সম্প্রসারণ আত্মঘাতী হবে৷ এগুলোকে রেখেই রাস্তা সম্প্রসারণের পথ বের করতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান