‘আর্জেন্টিনা যেন না জেতে'
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ব্রাজিলের ফুটবলপাগল মানুষদের কাছে ‘চিরশত্রু' মানেই আর্জেন্টিনা৷ এই সত্যটি আবার উঠে এসেছে নিউটন সিজার সান্টোসের লেখা ৬০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে৷ বইয়ের নাম, ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা: স্টোরিজ অফ দ্য বিগেস্ট ক্লাসিক ইন ওয়ার্ল্ড ফুটবল'৷ আগামী জুনে ব্রাজিল বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে বইটির যে কয়েক লক্ষ কপি বিক্রি হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ এ বই পড়লে ফুটবলের দুই পরাশক্তি সম্পর্কে অনেক মজার তথ্যই জানা যাবে৷
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার মুখোমুখি লড়াইয়ে কে বেশিবার জিতেছে এ নিয়ে দু'দেশের তথ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দু'রকম৷ প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচ কবে খেলা হয়েছিল এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে বলে দু'দেশই দাবি করে, বেশি ম্যাচ তারাই জিতেছে৷ তবে ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা: স্টোরিজ অফ দ্য বিগেস্ট ক্লাসিক ইন ওয়ার্ল্ড ফুটবল' গ্রন্থে নিউটন সিজার সান্টোস লিখেছেন, এ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সঙ্গে মোট ৯৯ বারের দ্বৈরথে দু'বার বেশি জিতেছে ব্রাজিল৷ দু'দেশের প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচটি হয়েছিল ১৯১৪ সালের ২৭ জুন৷ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচ ১-০ গোলে জিতে বিজয়োল্লাস করতে করতে দেশে ফিরেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা৷
এমনিতে ব্রাজিলের অনেক আগে ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা৷ আর্জেন্টিনার জাতীয় দল ফুটবল বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লড়াইয়ে নামে ১৯০২ সালে৷ অন্যদিকে ব্রাজিলের জাতীয় দল গড়া হয় ১৯১৪ সালে৷ তার মানে, জাতীয় দল যে বছর গড়া হলো সে বছরই আর্জেন্টিনায় গিয়ে বিজয়ীর বেশে ফিরেছিলেন ‘সাম্বা ফুটবল'-এর শিল্পীরা৷
সেই থেকে আর্তর্জাতিক পরিসরে সাফল্যের বিচারেও আর্জেন্টিনাকে পিছনে ফেলতে থাকে ব্রাজিল৷ নিজের লেখা বইয়ে সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন নিউটন সিজার সান্টোস৷ ব্রাজিল পরে ফুটবল খেলা শুরু করেও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনার আগে, ১৯৫৮ সালে৷ তারপর সাফল্যের ধারায় থেকে ১৯৭০ সালে তৃতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে জুলে রিমে ট্রফিটাও দেশে নিয়ে যায় চিরতরে৷ আর্জেন্টিনা প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতে তারও আট বছর পরে, অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে৷ এবার যখন ব্রাজিলে বসবে আরেকটি আসর তখন বিশ্বকাপ জয়ের হিসেবে আর্জেন্টিনার চেয়ে ৫-২ ব্যাবধানে এগিয়ে ব্রাজিল৷ ব্যাবধানটাকে কি ৫-৩-এ নামিয়ে আনতে পারবে লিওনেল মেসির দল?
পারলে আর্জেন্টিনা ভাসবে আনন্দের বন্যায় আর ব্রাজিল ডুবে যাবে হতাশায়, জ্বলে উঠবে বিক্ষোভের আগুন৷ দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যয় না করে বিপুল ব্যয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন করা হচ্ছে বলে সরকার বিরোধীরা অনেকদিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে৷ ব্রাজিলের অধিকাংশ নাগরিকের মতো ফুটবল বিশেষজ্ঞ নিউটন সিজার সান্টোসেরও আশঙ্কা নেইমারের দল বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হলে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠবে৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘ব্রাজিলের কিছু মানুষ এবার নিজেদের দলের ব্যর্থতা কামনা করছেন৷ তাঁরা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এবং সে কারণেই তাঁরা মনে করেন, বিশ্বকাপে ব্রাজিল ব্যর্থ হলে দেশে অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে, বিক্ষোভ আন্দোলন তীব্রতর হতে পারে এবং পরিণামে সামাজিক পরিবর্তনও আসতে পারে৷''
মার্তা নেগাইও তাঁর সঙ্গে একমত৷ রিও ডি জেনিরোর এই চিকিৎসক বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, ব্রাজিল যদি আগেভাগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়, কিংবা বিশ্বকাপ জিততে না পারে, জনতা তাহলে নিজেদের ক্ষোভ আর হতাশা জানাতে রাস্তায় নেমে আসবে৷ এত খরচ করে বিশ্বকাপ আয়োজন করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নটাও তখন অনেক বড় হয়ে উঠবে৷''
এ কারণে ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ এবার আরো বেশি করে চায় নিজেদের দেশে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপটা নিজেদের দলই জিতুক৷ তাঁদের আরেকটি চাওায়া – ব্রাজিল যদি না জেতে তাহলে অন্য যে কোনো দল জিতুক, তবে আর্জেন্টিনা যেন না জেতে৷ আর্জেন্টিনা সমর্থকদের ভাবনাও মোটামুটি একইরকম৷ বুয়েনস আইরেসের এক ডেন্টাল ক্লিনিকে কাজ করেন সেলিয়া ডমিনগুয়েজ৷ মানুষের দাঁত নিয়ে কাজ করেন, তাই বলে ফুটবল উন্মাদনা তাঁরও কম নয়৷ তিনি বললেন, ‘‘ব্রাজিলে আর্জেন্টিনা যদি বিশ্বকাপ জেতে সেটা হবে সবচেয়ে সুন্দর ঘটনা৷ আরো ভালো হয়, যদি ফাইনালটা হয় ব্রাজিলের বিপক্ষে এবং শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকে মেসির করা গোলে জয় ছিনিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা৷''
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)