লাদাখ সীমান্তে এ বার গুলি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২০লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে এ বার গুলি। ভারতের বিরুদ্ধে স্থিতাবস্থা লঙ্ঘনের অভিযোগ চীনের। সোমবার রাতেই এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল চীন। সরকারি ভাবে ভারত এ বিষয়ে মুখ না খুললেও সেনা বাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, সোমবার প্যাংগংয়ের দক্ষিণ প্রান্তে গুলি চলেছে। ১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম গুলি চলল ভারত-চীন সীমান্তে।
১৯৭৫ সাল থেকে ভারত এবং চীনের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল যে, সীমান্তে কোনও পক্ষই গুলি চালাবে না। বস্তুত সে কারণেই গত কয়েক বছরে ডোকলাম এবং লাদাখে যত বার দুই দেশের সেনা মুখোমুখি হয়েছে, তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। দিনের পর দিন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থেকেছে দুই পক্ষ। কিন্তু গুলি চলেনি। গালওয়ানে হাতাহাতিতে ভারতের ২০ জন জওয়ান নিহত হওয়ার পরেও কোনও পক্ষ গুলি চালায়নি। তবে গালওয়ানের পরই ভারত সিদ্ধন্ত নেয়, প্রয়োজনে তারা গুলি চালাবে। চীনকেও তা জানিয়ে দেয়া হয়। তবে এতদিন যা হয়নি, সোমবার সে ঘটনাই ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।
সোমবার রাতে চীনের সেনা মুখপাত্র একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। যেখানে বলা হয়, পূর্ব লাদাখে প্যাংগং লেকের দক্ষিণে ভারতীয় সেনা গুলি চালিয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করে চীনের প্রান্তে ঢুকেছে এবং উস্কানিমূলক কার্যকলাপ করেছে। ভারতীয় সেনা এমন করলে চীন জবাব দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চীনের পিপলস আর্মির মুখপাত্র।
চীনের এই অভিযোগের কোনও পাল্টা বিবৃতি জারি করেনি ভারত। সরকারি ভাবে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে মঙ্গলবার সেনার এক সূত্র জানিয়েছে, সোমবার সেখানে গুলি ছোড়া হয়েছে। চীনের বাহিনীকে সতর্ক করতেই ভারতীয় সেনা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, প্রথমে চীনের দিক থেকেই উস্কানিমূলক ভাবে গুলি ছোড়া হয়েছিল, ভারত তার জবাব দিয়েছে।
বস্তুত, গত ২৯ এবং ৩০ অগাস্ট থেকে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে নতুন করে ভারত এবং চীনের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। চীনের দাবি ভারত সীমান্তের স্থিতাবস্থা লঙ্ঘন করেছে। ভারত তা মানতে চায়নি। তবে ঘটনা হলো, ২৯ অগাস্ট রাতে ভারত সীমান্তে দুইটি পাহাড় নিজেদের দখলে নিয়েছে। যেখান থেকে সীমান্তের ওপারে পিপলস লিবারেশন আর্মির গতিবিধি স্পষ্ট দেখা যায়। চীন একে সীমান্ত লঙ্ঘন বললেও ভারতের দাবি, ওই দুইটি পাহাড় তাদের জমিতে। তবে পাহাড়দুটি যে অত্যন্ত স্ট্র্যাটেজিক, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
ভারতীয় সেনা ওই পাহাড়র দুটির দখল নেওয়ার পর থেকেই চীনের সেনা বার বার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছে। যার ফলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। কিন্তু ভারতীয় জওয়ানরা পাহাড় হাতছাড়া হতে দেয়নি। সেনার এক সূত্র জানিয়েছে, সোমবার নয়, ৩১ অগাস্টই সীমান্তে গুলি চলেছিল। তবে তাতে কেউ হতাহত হয়নি। দুই পক্ষই সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছিল। সোমবারও তেমনই ঘটনা ঘটেছে বলে সেনা সূত্র দাবি করেছে। তবে এই প্রথম সীমান্তে গুলির বিষয়টি বিবৃতির আকারে প্রকাশিত হলো।
গালওয়ানে সংঘাতের পর ভারতীয় সেনা অফিসাররা জওয়ানদের গুলি চালানোর অনুমতি দেন। কিন্তু জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একাধিকবার উত্তেজনা তৈরি হলেও গুলি চলেনি।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এক দিকে যখন কূটনৈতিক আলোচনা চলছে, তখন সীমান্তে গুলি চলার ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। দ্রুত সমাধান সূত্রে পৌঁছতে না পারলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে বলেই তাঁরা মনে করছেন। এক বার গুলির লড়াই শুরু হয়ে গেলে সীমান্ত সংঘাত যে অন্য চেহারা নেবে তা বুঝতে পারছে সব পক্ষই।
এসজি/ জিএইচ (পিটিআই, ইন্ডিয়া টুডে)