সাধনের অসাধারণ সরলতা
২৮ জানুয়ারি ২০২০মন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকা নওগাঁর পোরশা সীমান্তে সম্প্রতি বিএসএফ-এর গুলিতে তিন বাংলাদেশি নিহত হন৷ ঐ ঘটনার পর রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘... কেউ যদি জোর করে কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু আনতে যায়, আর ইন্ডিয়ার মধ্যে গুলি খেয়ে মারা যায়, তার কোনো দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের না৷’’
মন্ত্রী আসলে সীমান্ত হত্যা নিয়ে সরকারের মনোভাবটিই স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷ দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের না - এই মন্তব্য করে আসলে তিনি সরকারের অক্ষমতা ঢাকার চেষ্টা করেছেন৷ কারণ দায়-দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই৷ থাকলে কি আর এভাবে সীমান্ত হত্যা বাড়তে পারে?
একটু পরিসংখ্যান দেখে নেই৷ গতবছর জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালে সীমান্তে তিন বাংলাদেশি নিহত হয়েছিলেন৷ আর বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম ২ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৩৫ জন বাংলাদেশি৷ অর্থাৎ সরকারি হিসাবে এক বছরে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে ১২ গুণ! কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কি আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের উপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করতে দেখেছি?
বিজিবি কর্মকর্তারা অবশ্য বলে থাকেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে বিএসএফ-এর সঙ্গে কথা বলেন৷ কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁরা কীভাবে কথা বলেন যে, কোনো সমাধান আসে না?
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আসলে সরল মানুষ৷ সচিবালয়ে কাজ করা সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে শুনেছি, মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় তিনি নাকি প্রায়ই নিজের সিদ্ধান্তে ঠিক থাকতে পারেননা৷ অন্যদের মন্তব্যে নাকি খুব সহজেই প্রভাবিত হন৷
এছাড়া দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও কোন কথা কখন বলা ঠিক নয়, তা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি তিনি৷ তাইতো পেঁয়াজ সংকটের সময় তিনি একসময় বলে বসলেন, পেঁয়াজ ছাড়া ২২ পদের রান্না জানেন তিনি! তা হয়ত তিনি জানেনও৷ কারণ ২৭ বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চার মেয়ের দেখাশোনা খাদ্যমন্ত্রী নিজেই করেছেন৷ কিন্তু তাই বলে দেশের মানুষ যখন সংকটে তখন সমাধানের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে অমন কথা বলা কি একজন মন্ত্রীর সাজে?
ঠিক তেমনি সীমান্ত হত্যা বৃদ্ধি নিয়ে সবাই যখন চিন্তিত, তখন এর জন্য ভারতকে দায়মুক্তি দিয়ে বক্তব্য দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী ঠিক কাজটি করেননি৷ কারণ এর মাধ্যমে তিনি ভারতের এমন অপরাধকে একরকম জায়েজই করে দিলেন৷ অথচ ২০১৮ সালের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের সম্মেলনে সীমান্তে প্রাণঘাতী বা ‘লিথাল উইপন’ ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ভারত সেটি মানছে না৷
এসব কারণে আমরা যদি ধরে নেই, ভারতকে যথেষ্ট চাপ দেয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই, তাহলে বোধ হয় ভুল হবে না৷ কিন্তু সরকারের পক্ষেতো আর এটি স্বীকার করে নেয়া সম্ভব নয়, তাই সাধন চন্দ্র মজুমদারের মতো মানুষদের মন্তব্য থেকেই আমজনতাকে যা ভাবার ভেবে নিতে হবে৷