সিরিয়ার বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ
১১ নভেম্বর ২০১১শুক্রবারের বিক্ষোভে এখনো পর্যন্ত ১১ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ শুধু হোমস শহরেই মৃতের সংখ্যা ৭, যাদের মধ্যে এক বিদ্রোহী সৈন্যও রয়েছে৷ শোনা যাচ্ছে, সেনাবাহিনী ত্যাগ করে অনেকেই বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে৷ গত ৯ দিনে এই শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ১০৪ জন নিহত হয়েছে৷ অন্যান্য শহরেও প্রতিরোধ চলছে৷ বিক্ষোভকারীরা আরব লীগের উদ্দেশ্যে আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আরও কড়া অবস্থান নেওয়ার ডাক দিচ্ছে৷
আরব লীগের আরও জোরালো ভূমিকার দাবি
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও সিরিয়ার বিরোধী জোট আরব লীগের উদ্দেশ্যে শুধু সিরিয়াকে বহিষ্কার নয়, এই রাষ্ট্রজোটের উচিত নিজস্ব উদ্যোগে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হওয়া এবং সিরিয়ার উপর অস্ত্রশস্ত্র সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর দাবি জানানো৷ উদ্দেশ্য, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ যেন অবশেষে বুঝতে পারেন, যে তাঁর পদক্ষেপের পরিণতি মোটেই সুখকর হবে না৷
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ
‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'-এর অভিযোগ, আসাদ প্রশাসন সুপরিকল্পিতভাবে নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে৷ এই অভিযোগের সপক্ষে অত্যন্ত স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেশ করেছে সংগঠনটি৷ যেমন এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে অগাস্টের শেষ পর্যন্ত হোমস শহর ও প্রদেশের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তাদের রিপোর্টে৷ সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচারের শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী সহ মোট ১১০ জনের জবানবন্দীর ভিত্তিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে কমপক্ষে ৫৮৭ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে৷ রিপোর্টে সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামের বিস্তারিত বিবরণও রয়েছে৷ বিক্ষোভকারীদের এলাকায় খাদ্য ও পানীয় জল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে৷
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় প্রতিদিনই বিক্ষোভকারীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা চলছে৷ কিন্তু মিশর বা লিবিয়ার মতো বিদেশি সংবাদ মাধ্যম সেখানে গিয়ে সরাসরি পরিস্থিতি যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছে না৷ বিরোধীদের তোলা ছবি ও ভিডিও চোরাপথে দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে, যা দেখে পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়৷ গত প্রায় ৮ মাস ধরে সেদেশে সরকারের দমন অভিযান চলছে৷
আন্তর্জাতিক তৎপরতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সহ পশ্চিমা বিশ্ব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাইলেও রাশিয়া ও চীনের বিরোধিতায় কিছু করা যাচ্ছে না৷ এর প্রতিবাদে সিরিয়ায় বিক্ষোভকারীরা রাশিয়া ও চীন বিরোধী বিক্ষোভও দেখিয়েছে৷ এবার বিরোধীদের ঐক্য পরিষদের এক প্রতিনিধিদল রাশিয়ার সরকারের আমন্ত্রণে মস্কো যাচ্ছে৷ রুশ অর্থোডক্স গির্জার পোপ সিরিল সপ্তাহান্তে দামেস্ক সফরে যাচ্ছেন৷ তিনি প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন৷ উল্লেখ্য, সিরিয়ার সংখ্যালঘু খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের এক নেতা মন্তব্য করেছেন, প্রেসিডেন্ট আসাদই বিরোধীদের দাবি মেনে সংস্কারের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক