1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘যৌক্তিক সময়’ পাবে ইউনূস সরকার

২৬ আগস্ট ২০২৪

বাংলাদেশে সংসদ ভেঙে দেয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হয়৷ তবে সাংবিধানিক সেই বাধ্যবকতা বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্যকর নয় বলে মনে করেন আইন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ৷ বাস্তবতার নিরিখেই তা বিবেচনা করছেন তারা৷

https://p.dw.com/p/4jwIn
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের সম্মুখভাগ
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হলে নির্বাচন নিয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন থাকবে না বলে মনে করছেন একজন আইজীবীছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবৃল আউয়াল এক নিবন্ধে বলেছেন,"সংবিধান যদি বহাল থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদের বিধান মতে, তৎপরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে৷ যদি না করেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে ৭খ অনুচ্ছেদের বিধান মতে কমিশনাররা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ করে থাকবে ন৷”

তবে তিনি মনে করেন,"নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণ যখনই হোক না কেন, রাষ্ট্র ও সরকারের আইনগত ও সাংবিধানিক ভিত্তি মজবুত করতে হলে ‘সফল বিপ্লবোত্তর' উদ্ভূত এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে একটি অসামরিক ফরমান জারি করে প্রচলিত সংবিধান স্থগিত বা পাশাপাশি বহাল রেখে অসামরিক ফরমানকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে অবস্থান প্রদান করে সাংবিধানিক বা আইনগত সংকট পরিহার করা প্রয়োজন৷”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রবিববার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ‘‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়৷” তিনি তার ভাষণে সংস্কারের বিষয়ও তুলে ধরেন৷

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এই সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দেবো৷ আর সেই যৌক্তিক সময় কতদিন তা রাজনৈতিকভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ তবে আমরা এই সরকারকে সময় দিতে চাই৷”

সংবিধানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার হবে: কায়সার কামাল

তার কথা, ‘‘এটা তো শুধু নির্বাচনের বিষয় নয়৷ রাষ্ট্রের সংবিধানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার হবে৷ এখন যারা নির্বাচন কমিশনে আছেন তারা পতিত স্বৈরাচারের দোসর ৷ তারা অনেক কথা বলতে পারেন৷ তারা কেন নিজেরাই পদত্যাগ করছেন না- সেটাই প্রশ্ন৷ আর সংবিধান সংস্কার হলে সংবিধানে নতুন কী আসে তার ওপর নির্ভর করছে নির্বাচন৷ বাস্তবতার ওপর চিন্তা করতে হবে৷ মানুষের জন্যই আইন এবং সংবিধান৷”

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘‘সংসদ ভেঙে দেয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে৷ নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করলে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে৷ আর কোনো দৈবদুর্বিপাক হলে আরো তিন মাস৷ এরপরও যদি কোনো বিশেষ পরিস্থিতি হয় তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সময় আরো বাড়ানো যায়৷ এখানে সংবিধানের ব্যত্যয় হলেও সেটা সবার সমর্থনে হবে৷ তখন সংবিধান কোনো বাধা নয়৷”

নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগ না করলে তাদের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অভিশংসন করে অপসারণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় পার্টি এই সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চায়৷ আর সেটা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করতে পারে৷ প্রধান উপদেষ্টা বেশ কিছু সংস্কারের কথা বলেছেন৷ সেজন্য তো সময় লাগবে৷”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম মনে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংবিধানের যে বিধানগুলোর কথা বলছেন, তা ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এসেছে৷ এটা আমরা জানি৷ সরকারে যারা আছেন তারাও জানেন৷ এরই মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে রিট হয়েছে৷ সংশোধনী বাতিল হলে তো আর সাংবিধানিক প্রশ্ন থাকবে না৷ আর যদি বাতিল না-ও হয় তাতেও সমস্যা হবে না৷ কারণ, প্রধান উপদেষ্টা তো বলেছেন নির্বাচন কবে হবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত৷ সবার অভিপ্রায়ের পথে সংবিধান কখনো বাধা হয় না৷”
‘‘আর সংবিধানসহ নির্বাচন কমিশন সংস্কার হবে৷ যেসব সংস্কারের কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন তার জন্য সময় লাগবে৷ আবার ত্রয়োদশ সংশোধনী রিভিউয়ের আবেদন হয়েছে৷ তাতেও সংধিধান পরিবর্তন হতে পারে৷ সবচেয়ে বড় কথা ডকট্রিন অব নেসেসিটি৷ ফলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে আশঙ্কার কথা বলছেন তার গুরুত্ব নেই,” বলেন তিনি৷

সিইসি যে আশঙ্কার কথা বলছেন তার গুরুত্ব নেই: তানজীব উল আলম

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এই রকম পরিস্থিতি কি আগে কখনো হয়েছে? ফলে সংবিধান বা আইন দিয়ে সব কিছু ব্যাখ্যা করা যাবে না৷ সব কিছু আইন ও সংবিধানে পাওয়া যাবে না৷ পরিস্থিতি ও জনমতের ভিত্তিতেই সব কিছু হবে৷ আর অল্প সময়ে সব ব্যাপারে সিদ্ধান্তও পাওয়া যাবে না৷”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এক এগারোর সময়ে সেনা সমর্থিত সরকার নির্বাচন করতে দুই বছর সময় নিয়েছিলা৷ তারা জরুরি অবস্থা দিয়ে কাভার করেছে৷ নির্বাচনের তিন মাস আগে জরুরি অবস্থা তুলে নির্বাচন করেছে৷ কিন্তু এবারের সকার একটি বিপ্লবী সরকার৷ একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকার এসেছে৷ তাই তাদের জন্য সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ তাদের আদেশ বা ফরমানই আইন বা সংবিধান হিসেবে গণ্য হবে৷”

তার কথা, ‘‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর  সংবিধান প্রনয়নের আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশের মাধ্যমে চলেছে৷ পরে সেগুলোই সংবিধান ও আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷ এখনো সরকার যা করবেন, যে আদেশ দেবেন, সেটাই আইন ও সংবিধান৷ কারণ আইন, সংবিধান সব কিছুই সংস্কার হবে৷ প্রধান নির্বাচন কশিনার এখন যে কথা বলছেন, তার মনস্তত্ব কী তা তিনিই বলতে পারবেন৷”

‘তাহলে কি ফিরছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা?’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান