সোনিয়াকে রাহুলের মানা
৩ আগস্ট ২০১৪এর পাল্টা জবাব দিতে সোনিয়া গান্ধী নিজে একটা বই লেখবেন বলে জানিয়েছেন, যেন প্রকৃত সত্যটা বের হয়৷
প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নটবর সিং কংগ্রেস পার্টি এবং মনমোহন সিং-এর কংগ্রেস-জোট মন্ত্রিসভা থেকে বিতাড়িত হবার আট বছর পর ‘ওয়ান লাইফ ইজ নট এনাফ' নামে একটি আত্মজীবনীমূলক বই লিখে একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন গান্ধী পরিবারের৷
কি লিখেছেন তিনি?
প্রথম বোমাটি ফাটিয়েছেন এই বলে যে, দশ বছর আগে ২০০৪ সালে কংগ্রেস নির্বাচনে জেতায় দলনেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হবার কথা ছিল সোনিয়া গান্ধীর৷ কিন্তু ছেলে রাহুল গান্ধীর আপত্তিতে তিনি সরে দাঁড়ান৷ তাঁর জায়গায় ড. মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করেন৷ কিন্তু আসল কারণটা গোপন করে সোনিয়া গান্ধী সেসময় দেশের সামনে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বলেছিলেন, ক্ষমতার প্রতি তাঁর লোভ নেই, স্রেফ ‘অন্তরাত্মার ডাকে' তিনি মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছেন৷ সোনিয়া গান্ধীর তথাকথিত আত্মত্যাগকে মূলধন করে প্রচার চালিয়ে এসেছে কংগ্রেস পার্টি৷
নটবর সিং তাঁর বইয়ে লিখেছেন, এটা মিথ্যা৷ আসলে ছেলে রাহুল গান্ধীই মাকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেননি৷ কারণ রাহুলের মনে হয়েছে, এতে মায়ের প্রাণনাশের আশঙ্কা আছে৷ কাজেই সোনিয়ার আত্মত্যাগের বড়াই আর ধোপে টেকে না৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং-এর মতো একজনকে শিখণ্ডী খাড়া করে সরকার এবং দলে তিনিই ছড়ি ঘুরিয়ে এসেছেন৷ সোনিয়ার সবুজ সংকেত না পেলে সরকারের কোনো কাজই হতো না, এমনটাই লিখেছেন নটবর সিং৷ সোনিয়াকে তিনি বর্ণনা করেছেন কর্তৃত্বপ্রিয়, খেয়ালি এবং স্বৈরাচারী স্বভাবের মহিলা বলে৷
রাজীব গান্ধী সম্পর্কে বক্তব্য
রাজীব গান্ধী সম্পর্কে নটবর লিখেছেন, তিনি রাজনীতি বা কূটনীতি তেমন বুঝতেন না৷ রাজীব গান্ধীর পররাষ্ট্রনীতি ছিল ভুল, নাহলে শ্রীলংকার তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী এলটিটিই জঙ্গি সংগঠনকে দমন করতে শ্রীলংকায় সেনা অভিযান চালাতেন না৷ আর তারই পরিণামে রাজীব গান্ধীকে তামিল আত্মঘাতী বোমা হামলায় বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয়৷ তাঁর ভুল পররাষ্ট্রনীতির জন্যই এটা হয়েছে৷ তবে এইসব কথা অতিরঞ্জিত বলে উড়িয়ে দেয়া যেত, বা এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেত, যদি না বই প্রকাশের আগে সোনিয়া গান্ধী স্বয়ং এবং তাঁর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী গোপনে নটবর সিং-এর বাড়িতে গিয়ে ঐসব কথা না লেখার জন্য তাঁকে অনুরোধ করতেন৷ অর্থাৎ নটবর সিং এমন সব কথা জানেন যা ফাঁস করলে গান্ধী পরিবার এবং কংগ্রেস পার্টি বেকায়দায় পড়বে৷
কংগ্রেসের বক্তব্য
কংগ্রেস পক্ষের মন্তব্য, সোনিয়া গান্ধীর ওপর প্রতিশোধ নিতেই এটা লেখা হয়েছে৷ আর মায়ের প্রাণনাশের দুশ্চিন্তা ছেলে হিসেবে রাহুলের থাকতেই পারে৷ এটাই তো স্বাভাবিক৷ কারণ ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধী এবং বাবা রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড তিনি ভুলতে পারেন না৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বলেছেন, ঘরোয়া আলোচনায় এমন অনেক কথাই হয়, সেটাকে বই বিক্রি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা অনুচিত৷ আর সোনিয়া গান্ধীর মন্তব্য, এর জবাব তিনি দেবেন পাল্টা বই লিখে৷ সেই লেখা পড়লেই সকলে আসল সত্যটা জানতে পারবে৷ পাল্টা মন্তব্য নটবর সিং-এর৷ বলেছেন সোনিয়া গান্ধীর মতো এক জাতীয় ব্যক্তিত্বের অবশ্যই বই লেখা উচিত৷
যে কারণে নটবর সিং বিতাড়িত হয়েছিলেন
নেহেরু-গান্ধী জমানা থেকেই গান্ধী পরিবারের কাছের লোক ছিলেন প্রাক্তন কূটনীতিবিদ নটবর সিং৷ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে অবসর নেবার পর ১৯৮৪ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন৷ রাজীব গান্ধী মন্ত্রিসভার সদস্য হন৷ প্রথম মনমোহন সিং মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন৷ কিন্তু ইরাকের সঙ্গে তেলের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্প কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি৷ বিচার বিভাগীয় কমিশন নটবর সিংকে দোষী সাব্যস্ত করেন৷ তারপর সোনিয়া গান্ধী এবিষয়ে কড়া অবস্থান নেওয়ায় তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিতে হয়৷ তিক্ততার শুরু এখান থেকেই৷
প্রশ্ন এত বছর পরে কেন এইসব কথা? পর্যবেক্ষকদের মতে, তবে কি বিজেপি সরকার আসার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি? কারণ কংগ্রেসের এখন ঘোর দুর্দিন৷ সংসদীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের কোমর ভেঙে গেছে৷ সামনে চারটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট৷ তার আগে কংগ্রেস সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস যখন আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে এই ‘বই-বোমা' বিস্ফোরণ কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলতে পারে৷