স্টারমার কি যুক্তরাজ্যকে ইইউতে ফেরাবেন?
৪ জুলাই ২০২৪যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের জনমত জরিপ বলছে ১৪ বছর ক্ষমতায় ফিরছে লেবার পার্টি৷ ঋষি সুনাকের পরিবর্তে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ স্টারমারের উপরই আস্থা রাখছেন দেশটির ভোটাররা৷ ৬১ বছর বয়সি স্টারমার ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলেন৷ জিতলে ২০১৬ সালের গনভোটকে পুনর্বিবেচনা করবেন কিনা সে বিষয়ে অবশ্য নির্বাচনি প্রচারে তিনি কোনো কিছু খোলাসা করেননি৷
স্টারমার যুক্তরাজ্যেকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে টেনে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের জোটের বাইরে থেকে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া তার জন্য কঠিন বলে মত অনেকের৷ নির্বাচনি প্রচারে নিজে ব্রেক্সিট ইস্যুটিকে সামনে এনে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করতে চাননি বলে মনে করেন ইউরোপিয়ান মুভমেন্ট ইউকে সংগঠনের প্রধান মাইক গ্যালসওর্থি৷ তবে তার বিশ্বাস ক্ষমতায় এলে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে যারা ভোট দিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে এই ইস্যু নিয়ে চাপের মুখে পড়বেন স্টারমার৷
ব্রেক্সিট পুনর্বিবেচনার জন্য কতটা চাপে পড়বেন স্টারমার?
ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে কতটা ক্ষতি হয়েছে তারা নানা ধরনের হিসাব রয়েছে৷ তবে ব্রিটিশদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কাগজপত্রের জটিলতা যে আগের চেয়ে বেড়েছে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই৷ সবচেয়ে বড় অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্য যে কমে গেছে তা তো পরিসংখ্যানেই আছে৷
ব্রিটেনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের হিসাবে ব্রেক্সিটের পর থেকে ব্রিটেনের অর্থনীতি দুই থেকে তিন শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে৷ ২০৩৫ সাল নাগাদ এর প্রভাব পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
আরেক গবেষণায় দেখা গেছে ব্রেক্সিটের কারণে ২০৩৫ সাল নাগাদ যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ এক তৃতীয়াংশ কমে যাবে৷ এর ফলে ৩০ লাখ কম চাকরির সুযোগ তৈরি হবে৷
মেনজিস নামের একটি অ্যাকাউন্টেন্সি প্রতিষ্ঠান জরিপের মাধ্যমে জানিয়েছে ব্রিটেনের প্রতি পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি আবারো ইইউর একক বাজারে ফিরতে চায়৷ ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স বলছে, তাদের ৪১ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন ব্রেক্সিটের কারণে ইইউ দেশগুলোর সাথে পণ্য বেচাকেনায় জটিলতা তৈরি হয়েছে৷
ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের মহাপরিচালক শেভাউন হাভিল্যান্ড তাদের বার্ষিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আমাদের পণ্য ও সেবার বিক্রির প্রক্রিয়া আরো ব্যয়বহুল ও আমলাতান্ত্রিক হয়েছে৷’’
স্টারমার কী চান, কী পেতে পারেন?
লেবার পার্টি ২০২০ সালে বরিস জনসনের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের মধ্যকার বাণিজ্য ও অংশিদারত্ব চুক্তিকে আরো উন্নত করতে চায়৷ এর মূল উদ্দেশ্য হবে কাগজপত্রগত জটিলতা এবং সীমান্তে পরীক্ষা নিরীক্ষার ধাপগুলো কমানো৷
যুক্তরাজ্য-ইইউ প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারেও জোর দিচ্ছে দলটি৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো লেবার পার্টির আগ্রহ সত্ত্বেও এসব বিষয়ে ইইউ কতটা সাড়া দেবে৷ কিংস কলেজ লন্ডনের ইউরোপীয় রাজনীতির অধ্যাপক আনন্দ মেনন মনে করেন প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে ইইউ সাড়া দেবে না বলেই তার বিশ্বাস৷ বিশেষ করে গত বছর টরি সরকারের সাথে ইয়থ মোবিলিটি বিষয়ক এক চুক্তি নিয়ে ব্রাসেলসের প্রবল মতবিরোধ তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে৷ ক্ষমতায় এলে এক্ষেত্রে ভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন লেবার পার্টির নেতারা৷ লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, তারা নতুন করে ইয়থ মোবিলিটি কর্মসূচি হাতে নেবেন৷ স্টারমার বলেছেন, শিল্পীদের জন্য যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে তিনি কাজ করবেন৷
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আইনি কাঠামো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনি বাধাগুলো দূর করতে দুই পক্ষেরই সহযোগিতা করা উচিত বলে মনে করেন জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতি বিষয়ক প্রধান মেলানি ফোগেলবাখ৷ কিন্তু বড় ধরনের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইইউ খুব বেশ কিছু দিতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি৷
ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাইরে থেকে যুক্তরাজ্যের পক্ষে এই একক বাজারের সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে না৷ আর তা ২৭ দেশের জোটের জন্য খারাপ উদাহরণ হতে পারে৷
আনচাল ভোহরা/এফএস