1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোভিডের জেরে থমকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

করোনা অতিমারি স্তব্ধ করে দিয়েছিল জীবন৷ করোনা ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে৷ তাতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3pbOs
সরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমের ট্রান্সপ্লানটেশন ইউনিট
সরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমের ট্রান্সপ্লানটেশন ইউনিটছবি: Payel Samanta/DW

লকডাউন এবং যাতায়াতে বিধিনিষেধ বিশ্ব জুড়েই ব্যাহত করেছিল সমস্ত রকম পরিষেবাকে৷ করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগের চিকিৎসা একটু অবহেলিত হয়েছে বলা চলে৷ তাই কিডনি, লিভার, কার্ডিওভাসকুলার রোগগুলির ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন জরুরি হলেও তাতে বাধা পড়েছিল৷ কলকাতায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া প্রায় ছয় মাস বন্ধ ছিল৷ আনলক পিরিয়ডে আস্তে আস্তে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরছে৷ কিন্তু আগের যত অঙ্গ প্রতিস্থাপন হতো, এখনো তা হচ্ছে না৷

লকডাউনে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা বেড়েছে৷ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার সামর্থ্য মানুষের ছিল না৷ কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, লকডাউনের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছিল৷ ফলে অঙ্গগুলি কীভাবে নির্দিষ্ট হাসপাতালে এসে পৌঁছবে? কলকাতার অন্যতম সেরা বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডা. কুণাল সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লকডাউনের দশদিন আগে একটি হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট আমাদের হাসপাতালে হয়৷ পাটনা থেকে হার্ট নিয়ে আসা হয়েছিল৷ সেটা দশদিন পিছিয়ে গেলেই এটা সম্ভব হতো না৷’’ হার্ট প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘প্রায় সাত মাস কোনো প্রতিস্থাপন হয়নি৷ তারপর ধীরে ধীরে কাজ শুরু হয়েছে৷ সারা দেশে অন্যান্য বছর তিনশোর বেশি হার্ট প্রতিস্থাপন হয়ে গেলেও এবার সেই সংখ্যাটা ১০০৷’’

প্রায় সাত মাস কোনো প্রতিস্থাপন হয়নি: ডা. কুণাল সরকার

লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতি মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে ব্যাহত করেছে৷ বহু ক্ষেত্রেই ব্রেন ডেথ নির্ণয় করা যায়নি৷ লোকবল ও পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা তো ছিলই৷ তবে লকডাউনে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অনেক কমেছে৷ অঙ্গ প্রতিস্থাপন কম হলেও এটা আশার কথা৷ ধীরে ধীরে এই পরিকাঠামোর অসুবিধা মেনেই প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে৷

ভুক্তভোগীরা কী বলছেন? দীর্ঘদিন কিডনি নিয়ে ভুগছিলেন কুমোরটুলি এলাকার মিনতি বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে বা ব্রেন ডেথ হলে অন্যের কিডনি পাবেন, এই আশায় ছিলেন তিনি৷ ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্টেশন অর্গানাইজেশন (নোটো)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ মিনতি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নোটোতে নাম নথিভুক্ত করতে বলেছে৷ আমি একটি সংস্থার মারফত যোগাযোগ করলে তারা বলেছে, কিডনির জন্য লাইনটা সারা দেশে ছয় হাজারের কাছে পৌঁছেছে৷ এখন নাম নথিভুক্ত করলে কিডনি পেতে দুই থেকে আড়াই বছর সময় লেগে যাবে৷ লকডাউনের জন্য এমনিতে এটা আরও পিছিয়ে যাবে বলেই মনে হয়৷’’

বোঝাই যাচ্ছে, চাহিদার তুলনায় প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গের সংস্থান কম৷ এর কারণ সচেতনতার অভাব৷ সার্ভিস ডক্টর ফোরামের চিকিৎসক স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘‘মানুষের সচেতনতা খুবই কম৷ মরণোত্তর দেহদান করতে চাইলেও অঙ্গদানের ব্যাপারে অনেকটা পিছিয়ে৷ টাকার বিনিময়ে কিডনি নেওয়ার চল রয়েছে বেশি৷ লকডাউনে সচেতনতার প্রসারও ধাক্কা খেলো৷’’ দেহদান আন্দোলনের কর্মী ব্রজ রায় বলেন, ‘‘পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও ব্রেন ডেথের তুলনায় অঙ্গদানের সংখ্যা কম৷ তাই চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত অঙ্গ মেলে না৷’’

প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা রোগীদের অনেকে মারা গিয়েছেন: ডা. রাজেন পান্ডে

সরকারি স্তরেও করোনায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ অনেকদিন বন্ধ ছিল৷ কলকাতার অন্যতম সেরা, সরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এর কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাজেন পান্ডে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘করোনা একদম নতুন রোগ৷ ট্রান্সপ্লান্ট করালে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়৷ তাই করোনা পর্বে আমরা ট্রান্সপ্লান্ট বন্ধ রেখেছি৷ তাতে ক্ষতি হয়েছে বটেই৷ প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা রোগীদের অনেকে মারা গিয়েছেন, অনেক ট্রান্সপ্লান্টেড রোগী কোভিডে মারা গিয়েছেন৷ তবে এখন সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে৷’’

গত কয়েক বছরে ভারতে মেডিক্যাল ট্যুরিজম ফুলেফেঁপে উঠেছে৷ ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সরকারি তথ্য বলছে, মোট পর্যটকের কমপক্ষে ছয় শতাংশ ভারতে চিকিৎসার জন্য আসেন৷ ভারতের অনেক হাসপাতালেই রোগীদের মোট সংখ্যার ১০-১৫ শতাংশ বিদেশি৷ হাসপাতালগুলিও জানাচ্ছে, লকডাউনের ফলে বাংলাদেশ-সহ বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা কমেছে৷ বেসরকারি হাসপাতালের শীর্ষস্থানীয় কর্তা জানিয়েছেন, এবার বিদেশি রোগীদের সংখ্যা মোটে ২-৩ শতাংশ৷ বিদেশিদের বড় অংশ প্রতিস্থাপনের জন্য ভারতে আসেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য