চীনের এক সন্তান নীতি
৯ মে ২০১৩ঝাং ইমুকে চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রপরিচালকদের মধ্যে গণ্য করা হয়ে থাকে৷ কিন্তু ঠিক তাঁর বিরুদ্ধেই পূর্ব চীনের উসি শহরের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা তদন্ত চালাচ্ছেন, কেননা ঝাং-এর নাকি ‘‘অন্তত সাতটি সন্তান'' আছে, যা চীনের কড়া এক সন্তান নীতির একেবারেই পরিপন্থি৷
বিগত ত্রিশ বছর ধরে চীনে বিশেষ করে শহরের মানুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে৷ ব্যতিক্রমও কিছু কিছু রাখা হয়েছে, যেমন বাবা-মা দুজনেই তাদের বাবা-মায়েদের একমাত্র সন্তান হলে একটি দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়া চলতে পারে৷ গাঁয়ের মানুষদের প্রথম সন্তান একটি মেয়ে হলে দ্বিতীয় সন্তান হতে কোনো বাধা নেই৷ আর সংখ্যালঘু উপজাতিদের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতাই নেই৷
এ নিয়ম ভাঙলে নানা ধরনের দণ্ডের ব্যবস্থা আছে: অর্থদণ্ড থেকে শুরু করে পদোন্নতি রোখা পর্যন্ত৷ অর্থদণ্ডের ক্ষেত্রে তা সন্তানের সংখ্যা এবং নিয়মভঙ্গকারীর আর্থিক সঙ্গতির উপর নির্ভর করবে৷ তাই জাং ইমুর ক্ষেত্রে নাকি ১৬ কোটি ইউয়ান, অর্থাৎ দু কোটি ষাট লক্ষ ডলার ফাইন হতে পারে, বলে জানিয়েছে খোদ পিপলস ডেইলির ওয়েবসাইট!
ঝাং-এর ‘অপরাধের' বাকি খুঁটিনাটি পরিষ্কার নয়৷ সরকারি গ্লোবাল টাইমস সংবাদপত্র ‘অনলাইন পোস্ট'-এর সূত্রে জানিয়েছে যে, ঝাং-এর নাকি ‘‘একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক'' ছিল৷ পিপলস ডেইলির রিপোর্টেও ঝাং-এর সন্তানদের জন্মের স্থান অথবা সন-তারিখ বিশদ জানানো হয়নি৷
চীনের কাছে এক সন্তান নীতির গুরুত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না৷ অপরদিকে এও ঠিক যে, ঝাং ইমু ‘‘হিরো'' কিংবা ‘‘হাউস অফ ফ্লাইং ড্যাগার্স''-এর মতো মার্শিয়াল আর্টস ছবি তৈরি করে চীনা চলচ্চিত্র শিল্পের ভোল পাল্টে দিয়েছেন৷ বক্স অফিসের হিসেবে স্বদেশে তৈরি ছবি আজ হলিউডের সঙ্গে পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখে৷
ঝাং-এর সর্বাধুনিক ছবি হলো ‘‘দ্য ফ্লাওয়ার্স অফ ওয়ার'', যা ২০১১ সালে মুক্তি পায়৷ ছবিটিতে ক্রিস্টিয়ান বেইল অভিনয় করেছেন৷ ছবিটি হল ১৯৩৭ সালে নানজিং-এ জাপানিদের হাতে চীনাদের হত্যাকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক ড্রামা৷ মনে রাখা দরকার, ঝাং-এর গোড়ার দিকের ছবিগুলি চীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ কিন্তু সে যাবৎ তিনি কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন, নয়তো তাঁকে ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতো না৷
শেষমেষ এ সন্দেহ থেকেই যায় যে, ঝাং-এর কোনো নেপথ্য শত্রু বা শত্রুরা তাঁকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন৷ তবে তিনি যে হঠাৎ সরকারের কুনজরে পড়েছেন, তার কোনো লক্ষণ কিংবা কারণ এখনও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না৷
এসি/ডিজি (এএফপি)