‘দল গোছাচ্ছে বিএনপি’
১০ এপ্রিল ২০১৪স্বাভাবিকভাবেই দলটির তাই এখন ভঙ্গুর অবস্থা৷ নেতা-কর্মীদের সামনেও তেমন কোনো নির্দেশনা নেই৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক ধড়পাকরের মধ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কী করবেন – তাও বুঝতে পারছেন না৷
সদ্য শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনেও সরকারি সব কৌশলের মধ্যে ভালো করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা৷ এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি৷ বৃহস্পতিবার থেকেই তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করছেন দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ এছাড়া দলের যুগ্ম মহাসচিবরা তৃণমূল নেতাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনছেন, দিচ্ছেন নতুন দিক নির্দেশনা৷ নেতারা বলছেন, তৃণমূল গোছানোর পরই শুরু হবে যুগপদ আন্দোলন৷ সেই আন্দোলন দেখে নাকি আওয়ামী লীগ পালানোর পথও খুঁজে পাবে না৷
তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় ও সৈয়দপুরের তৃণমূল নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপির তিন যুগ্ম মহাসচিব৷ তাঁরা হলেন সালাউদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান মিনু ও মো. শাজাহান৷ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর বিকাল ৩টায় নীলফামারীর নেতাদের সাথে এই তিন যুগ্ম মহাসচিব মতবিনিময় করেন৷ জানা গেছে, এই তিন জেলার নেতাদের সাথে রাত ৯টায় বৈঠকে বসছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন সুখ-দুঃখের কথা শুনবেন এবং পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচীর বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন৷ এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় খালেদা জিয়ার সফর নিয়েও আলোচনা হবে ঐ মতবিনিময় সভায়৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, খুব শিগগিরই সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হবে৷ সেই আন্দোলন দেখে আওয়ামী লীগ পালানোর পথ খুঁজে পাবে না৷ আন্দোলন শুরুর আগে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতেই দলীয় চেয়ারপার্সন তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন৷ পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগের যুগ্ম মহাসচিবরাও তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন৷ সব কিছু মিলিয়ে দল গোছানোর পরই শুরু হবে কঠিন আন্দোলন৷ তিনি বলেন, জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখেই আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়া হবে৷
এদিকে বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ ঐ বৈঠক শেষে বিএনপি নেতারা কিছু না বললেও, বৃহস্পতিবার মুখ খুলেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার বিএনপি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা৷ তাঁর কথায়, উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ নজীরবিহীনভাবে সন্ত্রাস, কারচুপি ও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ফলাফল তাদের অনুকুলে নেয়৷ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নির্লজ্জভাবে আওয়ামী লীগকে সর্বাত্বকভাবে সহযোগিতা করছে৷
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন আন্দোলনে সারা দেশে বিরোধী দলের শত শত নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে৷ গুম হয়েছেন ৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মী৷ তাছাড়া হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার, গণগ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যের ফলে এক চরম অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, সারা দেশে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে সরকারের নানা পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয় সভায়৷ বিদ্যুৎ খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করে বারবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি জন-জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে বলে সরকারের প্রতি অভিযোগ করেন সদস্যরা৷