ব্রিটেনের ‘দাসত্বের’ কাহিনি
২৩ নভেম্বর ২০১৩থেমস নদীর দক্ষিণে ল্যামবেথ৷ সেখানকার একটি সাধারণ বাড়িতে এক অ-ব্রিটিশ দম্পতি – স্বামী-স্ত্রী দু'জনেরই বয়স ৬৭ – একজন ৬৯ বছর বয়সি মালয়েশীয় মহিলা, একজন ৫৭ বছর বয়সি আইরিশ মহিলা এবং একজন ৩০ বছর বয়সি ব্রিটিশ মহিলাকে বিগত ৩০ বছর ধরে বন্দি নয়, দাস করে রেখেছিল৷ এঁদের মধ্যে ব্রিটিশ মহিলাটি নাকি তাঁর গোটা জীবনই কাটিয়েছেন ঐ দম্পতির দাসত্ব করে৷ এটা কী করে সম্ভব? এটা কি আদৌ সম্ভব?
সম্ভব তো বটেই৷ ঐ মহিলাদের নাকি আপেক্ষিক স্বাধীনতা ছিল, যদিও তাঁরা শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের ভয়ে কখনো পালানোর কথা ভাবতে পারেননি৷ দৃশ্যত তাঁরা টেলিভিশন দেখতে পারতেন৷ পারিবারিক দাসত্ব সম্পর্কে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখে তাঁরা ১৮ অক্টোবর ফ্রিডম চ্যারিটি সংগঠনে টেলিফোন করার সাহস পান৷
ফ্রিডম চ্যারিটির প্রতিষ্ঠাতা অনীতা প্রেম দৃশ্যত উপমহাদেশীয় বংশোদ্ভূত৷ তাঁর এই চ্যারিটি প্রধানত জোর করে বিয়ে দেওয়া এবং পারিবারিক ‘অনার' সংক্রান্ত নিপীড়নের ব্যাপারে সক্রিয় হয়ে থাকে – আবার যে সব মহিলারা বিভিন্ন অসহনীয় পরিস্থিতিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তাদের নিয়েও কাজ করে৷ গোপন টেলিফোন কলের মাধ্যমে ব্রিটিশ ও আইরিশ মহিলা দু'জন তাঁদের বাসভবনের বাইরে কোথাও ফ্রিডম চ্যারিটির কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হতে সম্মত হন৷ তাঁরা জানতেন যে, পুলিশও সেই সাক্ষাতে উপস্থিত থাকবে৷
মহিলারাই পুলিশকে পরে ল্যামবেথের বাড়িটিতে নিয়ে যায়, পুলিশ যেখান থেকে মালয়েশীয় মহিলাটিকে উদ্ধার করে৷ তারিখটা ছিল ২৫ অক্টোবর৷ মহিলারা বিশেষভাবে ‘‘ট্রমাটাইজড'' বলে পুলিশ জানিয়েছে, তবে দৃশ্যত তাঁদের যৌন অপব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয়নি৷ পুলিশ অ-ব্রিটিশ দম্পতিটিকে গ্রেপ্তার করেছে মাত্র গত বৃহস্পতিবার – সেটা নাকি গোটা ঘটনা এত স্পর্শকাতর বলে৷ অবশ্য গ্রেপ্তার করার পরেই আবার জামিনে খালাসও দিতে হয়েছে৷
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হিউম্যান ট্র্যাফিকিং, অর্থাৎ মানুষ পাচার সংক্রান্ত ইউনিটের প্রধান ডিটেক্টিভ ইনস্পেক্টর কেভিন হাইল্যান্ড বলেছেন, এই আকারের এ ধরনের কোনো ঘটনা তাঁরা এর আগে দেখেননি৷ অনীতা প্রেম বলেছেন: লন্ডনের কেন্দ্রে একটি বড় রাস্তায় যে তিনজন মহিলাকে ৩০ বছর ধরে আটকে রাখা সম্ভব, সেটা ‘‘অবিশ্বাস্য''৷ তাঁর ব্যাখ্যা হলো:
‘‘কেউ যে কিছু জানতে পারেনি তার একটা কারণ হলো, আমরা সকলেই শশব্যস্ত হয়ে চড়কির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি৷ লোকজন এখন আর কোনো প্রশ্নও করে না৷ আমাদের প্রতিবেশিরা কে, তা আমরা নিজেরাই জানি না৷''
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি)